বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বিশ্বের সিমেন্ট শিল্পে প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ছে এবং সেইসঙ্গে বেড়েছে নানা চ্যালেঞ্জও। ২০২৪ সালে বৈশ্বিক সিমেন্ট উৎপাদন পৌঁছেছে প্রায় পাঁচ দশমিক এক শূন্য বিলিয়ন টনে। এর বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে চারশো তেইশ দশমিক দুই চার বিলিয়ন ডলারে।
আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আগামী ছয় বছরে এই শিল্পে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে চার দশমিক সাত পাঁচ শতাংশ। বিশ্লেষকদের ধারণা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক বাজারের পরিমাণ পৌঁছাবে পাঁচশো চুয়ান্ন দশমিক সাত এক বিলিয়ন ডলারে।
বিশ্বের মধ্যে চীন সবচেয়ে বেশি সিমেন্ট উৎপাদন করছে। পরিমাণ দুই দশমিক এক বিলিয়ন টনের বেশি। ভারতের অবস্থান দ্বিতীয়। তারা এক বছরে উৎপাদন করছে প্রায় চারশো দশ মিলিয়ন টন।
তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক। চীন ও ভারতের দ্রুত নগরায়ণ, অবকাঠামো প্রকল্প এবং নির্মাণ খাতে সরকারি বিনিয়োগ এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি।
বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্প দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল খাত হিসেবে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছে। ২০২৪ সালে দেশে সিমেন্ট উৎপাদনের সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে আট কোটি পঞ্চাশ লাখ টনের মতো, যদিও অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল মাত্র তিন কোটি ষাট লাখ থেকে তিন কোটি আশি লাখ টন। এর অর্থ দাঁড়ায়, দেশে সিমেন্ট উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ কম চাহিদা। বর্তমানে দেশে সক্রিয় রয়েছে পঁইত্রিশটিরও বেশি সিমেন্ট কোম্পানি। প্রথম সারির পাঁচটি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের বাজারের প্রায় পঞ্চান্ন শতাংশ।
বাংলাদেশে সিমেন্ট শিল্প সম্পূর্ণরূপে আমদানি নির্ভর কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল। লাইমস্টোন, ক্লিংকার প্রধানত আমদানি করা হয় ভারত, ভিয়েতনাম ও চীন থেকে।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ ২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ক্লিংকার আমদানি করেছে এক কোটি চল্লিশ লাখ টনেরও বেশি। দেশের বন্দরের সীমাবদ্ধতা ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচ বেড়েছে, যা উৎপাদন ব্যয়ে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।
তবে সিমেন্ট শিল্পে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি কোম্পানি এখন পরিবেশবান্ধব উৎপাদন পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছে। ফ্লাই অ্যাশ ও ব্লেন্ডেড সিমেন্টের ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে। টেকসই নির্মাণে সিমেন্টের ভূমিকা বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক সংস্থার গ্রিন সার্টিফিকেশন পাওয়ার চেষ্টা করছে অনেক কোম্পানি।
সরকারি অবকাঠামো প্রকল্প যেমন পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো প্রকল্পগুলো সিমেন্ট চাহিদা স্থিতিশীল রেখেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা, আমদানি নির্ভরতা ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এই শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলেও টেকসই প্রযুক্তি ও রপ্তানি বাজার ধরতে পারলে বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্প ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।