Home অন্যান্য পথিকের ডায়েরি: সেন্টোসার আলোছায়ায়

পথিকের ডায়েরি: সেন্টোসার আলোছায়ায়

সাইয়েদ আহমেদ : আজকের দিনটি শুরু থেকেই আলাদা মনে হচ্ছিল। সিঙ্গাপুরে এসে যে জায়গাটির কথা সবচেয়ে বেশি শুনেছি, সেটিই আজ দেখব—সেন্টোসা আইল্যান্ড। সকালবেলার নরম আলো আর হালকা বাতাসের সঙ্গে যখন দ্বীপের পথে রওনা হলাম, মনে হচ্ছিল শহরের কোলাহল ধীরে ধীরে পেছনে পড়ে যাচ্ছে।

দ্বীপে পা দিয়েই প্রথম যে অনুভূতিটা হলো, তা হলো প্রশস্ততা। চারপাশে খোলা আকাশ, সবুজ আর দূরে সমুদ্রের নীল রেখা। মনে মনে ভাবলাম, এ যেন ব্যস্ত জীবনের মাঝখানে এক টুকরো অবকাশ।

দিনের শুরুতেই ঢুকে পড়লাম ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে। প্রবেশদ্বার পেরোনোর মুহূর্তে ভেতরের শিশুটি যেন হঠাৎ জেগে উঠল। চারদিকে হাসি, চিৎকার, আনন্দের শব্দ। একের পর এক রাইডে উঠছি, কখনও ভয়, কখনও উল্লাস। পাশে দাঁড়িয়ে এক ভ্রমণসঙ্গী হেসে বলল, “এখানে এসে বয়সটা আর বয়স থাকে না।” কথাটা মনে গেঁথে গেল।

দুপুরের দিকে শরীর যখন একটু ক্লান্ত, তখন জলবৎ পার্ক যেন নতুন প্রাণ এনে দিল। ঠান্ডা পানির ছোঁয়ায় সব ক্লান্তি মিলিয়ে গেল। ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল, সময় যেন থেমে গেছে। চারদিকে মানুষের হাসি, পানির ছিটে, রোদের ঝিলিক—সব মিলিয়ে এক ধরনের নির্মল আনন্দ।

বিকেলের দিকে চলে গেলাম সৈকতে। নরম বালির ওপর পা রাখতেই এক অদ্ভুত শান্তি। ঢেউ এসে পায়ের কাছে ভেঙে যাচ্ছে, আবার ফিরে যাচ্ছে। আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে শুধু তাকিয়ে থাকলাম সমুদ্রের দিকে। এই নীরবতাটুকু অনেক দিনের জমে থাকা কথার চেয়েও বেশি কিছু বলে দিল।

সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সেন্টোসা বদলে গেল। আলো জ্বলে উঠল, চারপাশে রঙের খেলা। দূরে হাসির শব্দ, কাছে আলোছায়ার মায়া। আমরা কয়েকটা ছবি তুললাম, কিন্তু মনে হলো—কিছু দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা যায় না, শুধু মনে রেখে দিতে হয়।

রাতের ফেরার পথে গাড়ির জানালা দিয়ে দ্বীপটাকে শেষবারের মতো দেখলাম। মনে হলো, আজকের দিনটা শুধু ঘোরা নয়, নিজের ভেতর জমে থাকা ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলার দিন। সেন্টোসা আইল্যান্ড আমাকে শুধু বিনোদন দেয়নি, দিয়েছে এক ধরনের হালকা হয়ে যাওয়ার অনুভূতি।

ডায়েরির পাতায় লিখে রাখলাম—
কিছু জায়গা থাকে, যেখানে গেলে মনটা একটু বেশি নিজের মতো হয়ে যায়। সেন্টোসা আজ তেমনই এক জায়গা হয়ে রইল।