খবরের আড়ালে যিনি খবর হয়ে উঠেছেন

    আমিরুল মোমেনিন

     আমিরুল মোমেনিন: সাংবাদিকতার ছায়াবৃক্ষের এক নীরব পথিক

    কামরুল ইসলাম, ঢাকা:   সাংবাদিকতা পেশায় কিছু মানুষ থাকেন, যাঁদের পথচলা হয় দৃশ্যপটের আড়ালে, অথচ তাঁদের অবদান ছড়িয়ে থাকে প্রতিটি লাইনের ভেতর, প্রতিটি উপস্থাপনায়। আমিরুল মোমেনিন তেমনই এক মানুষ, যিনি সংবাদপত্রের প্রায় প্রতিটি শাখায় নিঃশব্দে রেখে গেছেন দক্ষতার ছাপ, একাগ্রতার স্পর্শ।

    খুলনার বাগেরহাট জেলার পল্লি থেকে উঠে এসে যাঁর প্রথম কর্মজীবন শুরু হয়েছিল মিরপুরের একটি স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে। পড়াশোনা করেন বাগেরহাট হাই স্কুল এবং বাগেরহাট পিসি কলেজে। তাঁর সাংবাদিকতার পথচিত্র একেবারেই স্বাভাবিক ছিল না। অথচ সময়ের সাথে নিজেকে গড়েছেন তিনি সংবাদ জগতের এক আস্থাভাজন সম্পাদক হিসেবে। ‘দৈনিক কিষাণ’-এর হাত ধরে তাঁর সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি। সেখানেই রিপোর্টিং থেকে শুরু করে ডেস্ক পর্যন্ত নানা দায়িত্বে নিজেকে মেলে ধরেন।

    ১৯৮৫ সালের আগস্ট মাসে তিনি যোগ দেন রাজধানীর ‘খবর গ্রুপ অব পাবলিকেশন্স’-এ। দৈনিক খবর-এ সহ সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরুর পর, পরিণত হন শিফট ইনচার্জ-এ। এরপর তাঁর মেধা ও নেতৃত্বগুণে তাঁকে অর্পণ করা হয় ‘বর্তমান দিনকাল’ সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের সামগ্রিক দায়িত্ব। এ সময় তিনি ছিলেন কনটেন্ট পরিকল্পনা ও সম্পাদনার মূলে, যা একটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনের জন্য ছিল বিশেষ দক্ষতার দাবি।

    পরবর্তীতে সরকারি মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’-এর বাংলা বিভাগে প্রধান বার্তা সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি, সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান সম্পাদকের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করেছেন। বাসস-এর মতো রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থায় দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা যেমন গর্বের, তেমনি তা দায়িত্ববোধেরও প্রতিফলন। তাঁর তত্ত্বাবধানে বাসস-এর বাংলা ডেস্কে সংবাদ পরিবেশন হয়েছে গুণগত মানের সমন্বয়ে, নির্ভুলতায়।

    প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার অধিকারী আমিরুল মোমেনিন অবসরের পরেও থেমে যাননি। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সম্পাদকীয়, মতামত ও ফিচার লিখে গেছেন অবিরাম। একজন সাংবাদিক হিসেবে কেবল সংবাদের ভাষা নয়, তিনি রপ্ত করেছিলেন ভাবনার ভাষাও। সেই চিন্তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই তাঁর লেখনীতে।

    তাঁর সক্রিয়তা কেবল অফিসঘরের চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ ছিল না। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং জাতীয় প্রেসক্লাব সবখানেই তাঁর যুক্ত থাকা প্রমাণ করে যে তিনি ছিলেন সাংবাদিক সমাজের সুখ-দুঃখের একজন প্রকৃত সহযাত্রী। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে তিনি বহুবার কণ্ঠ মিলিয়েছেন সংগ্রামের মিছিলে।

    বর্তমানে আমিরুল মোমেনিন ক্যান্সারে আক্রান্ত। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের পর তিনি নিচ্ছেন কেমোথেরাপি। একসময় যিনি অসংখ্য সংবাদকর্মী ও পাঠকের খবর পৌঁছে দিয়েছেন নিরলসভাবে, আজ তিনি নিজেই খবরের মানুষ হয়ে উঠেছেন। তিনি ভারত, আমেরিকাসহ বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং কলকাতার একটি সংবাদপত্রেও ঢাকাস্থ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন।

     আমিরুল মোমেনিনের মতো মানুষদের জন্য বাহ্যিক প্রচার নয়, বরং প্রয়োজন নীরব শ্রদ্ধা। কারণ, একজন সংবাদকর্মী কেবল সংবাদ তৈরি করেন না, তৈরি করেন সময়ের দলিল যা থেকে ভবিষ্যৎ ইতিহাস তৈরি হয়।