আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম এখন যেন আকাশ স্পর্শ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এক বছর আগেও যারা ভেবেছিলেন আউন্সপ্রতি ২,৫০০ বা ২,৬০০ ডলারে স্বর্ণ কেনা মানেই লোকসান, আজ ৩,৫০০ ডলারের রেকর্ড দেখে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
প্রশ্নটা এখন আর ‘দাম কেন বাড়ছে’ তা নয়, বরং সাধারণ মানুষের মনে এখন একটাই জিজ্ঞাসা—এই পাগলা ঘোড়া থামবে কোথায়?
আসলে স্বর্ণের এই তেজি ভাবের পেছনে নির্দিষ্ট কোনো জাদুকরী কারণ নেই, বরং পরিস্থিতির এক অদ্ভুত মারপ্যাঁঁচ কাজ করছে। একদিকে আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমানোর ঘোষণা দিচ্ছে, যা সরাসরি ডলারের গায়ে চিমটি কাটছে। বিনিয়োগকারীরা দেখছেন ডলার দুর্বল হচ্ছে, তাই তারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঝাপিয়ে পড়ছেন স্বর্ণের ওপর।
অন্যদিকে, পৃথিবীর এক প্রান্তে যুদ্ধ থামছে না, অন্য প্রান্তে নতুন উত্তেজনার পারদ চড়ছে। যখনই বিশ্বে ডামাডোল তৈরি হয়, তখনই মানুষ সোনার ওপর ভরসা করে—ইতিহাস তো অন্তত তাই বলে।
তবে এবারের দৃশ্যপট একটু আলাদা। শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারী নয়, চীন-ভারতের মতো বড় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন পাগলের মতো সোনা কিনছে।
তাদের লক্ষ্য একটাই—ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজেদের রিজার্ভকে সুরক্ষিত রাখা। এই যে ‘ডি-ডলারাইজেশন’ বা ডলারের বিকল্প খোঁজার লড়াই, এটাই মূলত স্বর্ণের দামকে এই উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে।
তাহলে কি এই দাম বাড়তেই থাকবে? বাজারের ঝানু বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ এই দাম ৪,৫০০ থেকে ৫,০০০ ডলারে গিয়ে ঠেকলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে একটা কথা মনে রাখা জরুরি—গাছ যেমন আকাশ ফুঁড়ে ওপরে উঠে যায় না, স্বর্ণের দামও চিরকাল বাড়বে না। একটা পর্যায়ে গিয়ে যখন বিশ্ব রাজনীতি স্থিতিশীল হবে, তখন হয়তো দাম কিছুটা থিতু হবে। কিন্তু সেই ‘পিক’ বা সর্বোচ্চ শিখর কখন আসবে, তা নিয়ে বাজি ধরার সাহস এখন খুব কম মানুষেরই আছে।
তথ্যাভিজ্ঞমহল মনে করেন, উচ্চমূল্যে স্বর্ণে বিনিয়োগ করাটা এখন অনেকটা ‘দুধারী তলোয়ারের’ মতো। লাভ যেমন হতে পারে, আবার বাজার সংশোধন হলে লোকসানের ঝুঁকিও থাকে। তাই আবেগে পড়ে নয়, বরং বাজারের মতিগতি বুঝে ঠান্ডা মাথায় পা ফেলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।










