Home অন্যান্য “হরি ঘোষের গোয়াল”

“হরি ঘোষের গোয়াল”

“হরি ঘোষের গোয়াল” প্রবাদটির উৎপত্তির পেছনে নদীয়া জেলার শান্তিপুরের হরি ঘোষ সম্পর্কিত যে কাহিনীটি প্রচলিত আছে, তা বেশ চমকপ্রদ। 

১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও পরিচয়
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে নদীয়া জেলার শান্তিপুরে হরি ঘোষ নামে এক অত্যন্ত দানশীল ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কলকাতার বিখ্যাত ‘শোভাবাজার রাজবাড়ি’র দেওয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মজীবন শেষে তিনি শান্তিপুরে নিজ বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।
২. আশ্রয় ও অবারিত আতিথেয়তা
হরি ঘোষ ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু এবং অতিথিবৎসল। তার বাড়িতে বিশাল একটি গোশালা বা গোয়ালঘর ছিল। লোকমুখে প্রচলিত যে, তিনি কেবল গরু রাখার জন্যই সেই গোয়ালঘর ব্যবহার করতেন না; বরং দেশ-বিদেশ থেকে আসা ভবঘুরে, অসহায় এবং আশ্রয়হীন মানুষদের সেখানে থাকতে দিতেন।
অবারিত দ্বার: তার বাড়িতে আসা যে কেউ বিনা বাধায় আশ্রয় ও খাবার পেতেন।
নিয়মশৃঙ্খলার অভাব: আশ্রিতদের ওপর কোনো কড়া শাসন ছিল না। ফলে সেখানে ভিড় সব সময় লেগেই থাকত।
৩. প্রবাদটির উৎপত্তি (অলস ও নিষ্কর্মা মানুষের আড্ডা)
হরি ঘোষের সেই আশ্রয়ে ধীরে ধীরে এমন অনেক লোক এসে জুটল যারা কোনো কাজকর্ম করত না। তারা সারাদিন সেখানে শুয়ে-বসে থাকত, হৈ-চৈ করত এবং একে অপরের সাথে নিরর্থক তর্কে মেতে থাকত।
মূলত সেই বিশাল গোয়ালঘরে অসংখ্য অকেজো মানুষের ভিড় ও উচ্চৈঃস্বরে গোলমাল থেকেই “হরি ঘোষের গোয়াল” কথাটি প্রচলিত হয়ে যায়। বর্তমানে এটি এমন কোনো জায়গাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যেখানে:
  • অপ্রয়োজনীয় মানুষের প্রচুর ভিড় থাকে।
  • কোনো নিয়ম-কানুন বা শৃঙ্খলা নেই।
  • অলস ব্যক্তিদের আড্ডাখানা জমে ওঠে।

৪. অন্য একটি মত (সংক্ষেপে)
যদিও আপনি নদীয়ার প্রেক্ষাপটটি জানতে চেয়েছেন, তবে অন্য একটি জনপ্রিয় মত হলো কলকাতার অহিরিটোলা অঞ্চলের হরি ঘোষকে নিয়ে। তিনিও একইভাবে নিষ্কর্মা ও পরগাছা স্বভাবের লোকেদের অন্ন-বস্ত্র ও আশ্রয় দিতেন, যার ফলে তার নামটিও এই প্রবাদের সাথে জড়িয়ে যায়।

#হরিঘোষেরগোয়াল #বাংলাপ্রবাদ #বাংলাভাষা #বাঙালিসংস্কৃতি #শান্তিপুর #নদীয়া #বাংলাগল্প #অলসআড্ডা #ঐতিহ্য