আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের বালুচিস্তানে এক নারী ও এক পুরুষকে গুলি করে হত্যার ভয়াবহ একটি ভিডিও রবিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কথিত ‘অনার কিলিং’ বা পারিবারিক সম্মানের নামে সংঘটিত এই নৃশংসতা দেশজুড়ে চরম ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, পাহাড়ি ও মরুভূমিসদৃশ অঞ্চলে, দিনের আলোয় একদল সশস্ত্র লোক একটি নারী ও একজন পুরুষকে গাড়ি থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ভিডিওতে প্রত্যেকে ব্রাহুই ভাষায় কথা বলছে, যা কুয়েটা ও মাস্তুং এলাকার স্থানীয় উপভাষা বলে চিহ্নিত করেছে বিবিসি।
ভিডিওর শুরুতে দেখা যায়, কয়েকটি জিপগাড়ি দাঁড়িয়ে আছে এবং তাদের আশপাশে লোকজন জড়ো হয়েছে। এরপর এক নারী, যিনি লাল পোশাক ও হালকা বাদামি চাদর পরে ছিলেন, তাকে গাড়িগুলোর কিছুটা দূরে দাঁড়াতে বলা হয়। ওই সময় ওই নারী ব্রাহুই ভাষায় বলেন, “শুধু গুলি চলবে, আর কিছু নয়।” তিনি কোনো প্রতিরোধ করেননি।
এরপর একে একে গুলির শব্দ শোনা যায়। ভিডিওতে স্পষ্ট নয় প্রথমে কাকে গুলি করা হয়। কিন্তু এক পর্যায়ে একজন বলছেন, “ওকে মারো।” এর সঙ্গে সঙ্গেই গুলির শব্দ আরও জোরালো হয়ে ওঠে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বালুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ। করাচি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের তিনি জানান, “ঘটনাটি বালুচিস্তানেরই কোনো এলাকায় সংঘটিত হয়েছে। যদিও এখনও সুনির্দিষ্ট স্থান ও সময় জানা যায়নি।”
তিনি আরও বলেন, “ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের ছবি জাতীয় পরিচয়পত্র কর্তৃপক্ষের (নাডরা) মাধ্যমে যাচাই করে একজন অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে।”
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মীর সরফরাজ বুগতি এই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত সব অপরাধীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “আইনের শাসনের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যারা রাষ্ট্রের আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, তাদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।”
রিন্দ জানান, নিহতদের নাম ও তারা কোন গোত্রের, তা নির্ধারণ করা গেছে, তবে তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হয়নি। এ পর্যন্ত নিহতদের স্বজনেরা কোনো মামলা দায়ের করেননি। তাই সরকার নিজ উদ্যোগে মামলা করেছে।
সরকার জনগণকে অনুরোধ করেছে, কেউ যদি অভিযুক্তদের সম্পর্কে কোনো তথ্য জানেন, তা যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান।
বালুচিস্তান সরকারের মুখপাত্রের ভাষায়, “সরকার এ ধরনের নৃশংসতার বিষয়ে নীরব দর্শক হয়ে থাকবে না। আইনানুগ সব ব্যবস্থা নিয়ে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।”