Home First Lead . চাহিদা কম, সরবরাহ বাড়ছে, অপরিশোধিত তেলে চাপ

. চাহিদা কম, সরবরাহ বাড়ছে, অপরিশোধিত তেলে চাপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নতুন বছরের শুরুতেই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দামে বড় ধরনের ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বছরের শুরুতে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম আশির ঘর ছুঁয়েছিল। কিন্তু জুন মাসে এসে সেই দাম নেমে এসেছে পঁয়ষট্টি থেকে সত্তরের মধ্যে। এই দামের পতনের পেছনে একাধিক বৈশ্বিক কারণ সক্রিয় রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী শিল্প উৎপাদন কমে যাওয়ায় জ্বালানির চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। একইসঙ্গে ওপেক প্লাস ঘোষণা দিয়েছে, তারা জুলাই মাস থেকে দৈনিক উৎপাদন বাড়াবে। ফলে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এতে বাজারে সাময়িকভাবে দাম কিছুটা বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে মূল্য কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ওপেক প্লাসের সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সামগ্রিকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাজারে একটি চাপ তৈরি করেছে। সৌদি আরব চাইছে দ্রুত উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারে আধিপত্য বজায় রাখতে। অপরদিকে রাশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশ ধীরে উৎপাদন বাড়ানোর পক্ষে।

এদিকে কানাডার কিছু বনাঞ্চলে দাবানলের কারণে বেশ কয়েকটি পরিশোধনাগার সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, যা বাজারে কিছুদিনের জন্য সরবরাহ সংকট তৈরি করেছিল। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।

চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে শিল্প উৎপাদনের গতি প্রত্যাশার তুলনায় কম থাকায় তেলের চাহিদা প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। বিশেষ করে ভারতে রাশিয়ার থেকে ছাড়কৃত দামে তেল আমদানি বেড়েছে। মে মাসে দেশটি প্রায় এক কোটি নব্বই লাখ ব্যারেল তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করেছে, যা গত দশ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এতে বিশ্ববাজারের ওপর প্রভাব পড়েছে।

অপরদিকে সৌদি আরবভিত্তিক রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান আরামকো তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে পাঁচশো কোটি ডলারের মূল্যের বন্ড ছেড়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, তেলের দাম কমে যাওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানটি তাদের আয় রক্ষা করতে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য সংস্থা পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে বৈশ্বিক উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি হবে। এতে বিশ্বব্যাপী মজুত বেড়ে যাবে এবং তেলের দাম আরও নিচে নামতে পারে।

সবশেষে বাজার বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বর্তমান পরিস্থিতিতে তেলের মূল্য স্বল্পমেয়াদে স্থিতিশীল থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে যদি উৎপাদন প্রবাহিত হতে থাকে এবং চাহিদা না বাড়ে, তবে ভবিষ্যতে বড় ধরনের মূল্যপতনের সম্ভাবনা রয়েছে।