Home বিনোদন অভিনেত্রী হুমাইরার মৃত্যু নিয়ে উত্তাল পাকিস্তান

অভিনেত্রী হুমাইরার মৃত্যু নিয়ে উত্তাল পাকিস্তান

পাকিস্তানি মডেল ও অভিনেত্রী হুমাইরা আসগর। ছবি: সংগৃহীত
বিনোদন ডেস্ক: পাকিস্তানি টেলিভিশনের পরিচিত মুখ, অভিনেত্রী হুমাইরা আসগরের মৃত্যু ঘিরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চাঞ্চল্য। তবে তার মৃত্যু-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ যেন আরও বেশি হৃদয়বিদারক। সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে নিজ কন্যার মরদেহ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তার বাবা নিজেই। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘আমি হুমাইরার সঙ্গে অনেক আগেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। এখন তার লাশ নেওয়ারও ইচ্ছা নেই।’
জানা গেছে, হুমাইরার মরদেহ করাচির একটি বেসরকারি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে ফরেনসিক তদন্তের আগে চূড়ান্ত কিছু বলা হয়নি। অভিনেত্রী একাধিক টিভি নাটকে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম রিল বানানোয় বেশি মনোযোগী ছিলেন।
পারিবারিক সম্পর্কের ভাঙন

হুমাইরার বাবা, লাহোরের এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মেয়ের জীবনযাপন আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধের সঙ্গে মেলে না। সে বহু বছর আগে ঘর ছেড়েছিল। আমরা চেষ্টা করেছিলাম তাকে ফেরানোর, কিন্তু সে নিজের পছন্দ মতো জীবন বেছে নেয়। আমি বহুবার তাকে সতর্ক করেছি।’

এই বক্তব্য পাকিস্তানি সমাজে একটি বড় ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, পরিবার তার পাশে না দাঁড়ানোয় হুমাইরা হয়তো চূড়ান্তভাবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। অন্যদিকে, কিছু কট্টর রক্ষণশীল গোষ্ঠী বলছে, একজন বাবা তার বিশ্বাসবিরোধী জীবনধারা মেনে না নেওয়ায় দোষারোপ করা ঠিক নয়।

লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি: আইনগত প্রশ্ন

অভিনেত্রীর মৃত্যুর পর স্থানীয় থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ‘হুমাইরার বাবা আনুষ্ঠানিকভাবে লাশ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে লিখিত দিয়েছেন। এখন বিষয়টি ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে গড়াবে।’ পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, যদি পরিবারের কেউ মরদেহ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়, তবে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দাফনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া

অভিনেত্রীর অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশের পাশাপাশি ক্ষোভও প্রকাশ করছেন। অনেকেই লিখছেন, ‘মেয়েটি যদি ভুল করে থাকে, তবে তাকে মৃত্যুর পর এতটা অমানবিকভাবে প্রত্যাখ্যান করা কি ন্যায্য?’ অনেকে আবার হুমাইরার পিতা-মাতার অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে মন্তব্য করছেন যে, সন্তান যদি পরিবার ও সমাজের গণ্ডি ছাড়িয়ে জীবনযাপন করে, তবে সে নিজ দায়েই দায়ী।

তারকার পতন না সমাজের ব্যর্থতা?

হুমাইরা আসগরের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে উন্মোচিত হয়েছে পাকিস্তানি সমাজে নারী শিল্পীদের প্রতি বিদ্বেষ, পারিবারিক সহায়তার অভাব ও মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব। কেউ বলছেন, ‘হুমাইরা হয়তো বেঁচে থাকতেন, যদি পরিবার পাশে থাকত।’ আবার কেউ বলছেন, ‘সে যা করেছে, তার ফল এইটিই।

বর্তমানে হুমাইরার মরদেহ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে। যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো স্বজন না এগিয়ে আসে, তবে করাচি নগর প্রশাসনের উদ্যোগে তার দাফন সম্পন্ন হবে।