আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইসলামি রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামির নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫ থেকে ৭ ডলার পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হরমুজ প্রণালীতে উত্তেজনা বাড়লে তেল সরবরাহে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটতে পারে। উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ জ্বালানি তেল এই প্রণালী দিয়ে রপ্তানি হয়। অতীতে বহুবার ইরান এই জলপথ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এবার আইআরজিসি প্রধানের সরাসরি হত্যাকাণ্ডের পর সে হুমকি বাস্তব রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো, যাদের বেশিরভাগ জ্বালানি আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবহন ও উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে, যা শেষমেশ বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা সৃষ্টি করবে।
অন্যদিকে, তেল সরবরাহে বিকল্প উৎস হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল ও উত্তর সাগরীয় অঞ্চলের উপর চাপ বাড়বে। কিন্তু এই অঞ্চলের উৎপাদন তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ানো সম্ভব না হওয়ায় বাজার স্থিতিশীল রাখাও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক শেয়ারবাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি স্টক এক্সচেঞ্জে বড় ধস দেখা গেছে। জ্বালানি-নির্ভর শিল্প ও পরিবহন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুধু সামরিক সীমারেখায় সীমাবদ্ধ নেই এটি বিশ্ব অর্থনীতিকে এক অনিশ্চিত দিকেও ঠেলে দিচ্ছে। যদি ইরান হরমুজ প্রণালীতে সামরিক তৎপরতা শুরু করে কিংবা তার আঞ্চলিক মিত্র হুথি বা হিজবুল্লাহর মাধ্যমে সৌদি আরব বা ইরাকের তেল স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ওপেক সদস্য দেশগুলোকে পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে বর্তমান অবস্থায় তা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ও স্থিতিশীল সম্পদে বিনিয়োগ বাড়াতে পারেন। তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাময়িক শেয়ারবাজারের পতন হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে জ্বালানি খাতের কিছু বিনিয়োগ লাভজনক হতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
বাংলাদেশের বাজারে এ সংকটের প্রভাব দ্রুতই পড়তে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়বে, যা মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অপরিশোধিত তেলের উপর নির্ভরশীলতা থাকায় বিদ্যুৎ খাতেও সংকট দেখা দিতে পারে।