Home চট্টগ্রাম এনসিটি পরিচালনায় বন্দরের পদক্ষেপ শুরু, সরঞ্জাম সরবরাহে দরপত্র

এনসিটি পরিচালনায় বন্দরের পদক্ষেপ শুরু, সরঞ্জাম সরবরাহে দরপত্র

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল ( এনসিটি ) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি অপারেটরের হাতে দেয়ার আগে অন্তর্বর্তী সময়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার প্রথম ধাপ হিসেবে শুরু হলো ‘ট্রাক্টর ট্রেইলার ও প্রাইম মুভার’ সরবরাহের জন্য একটি উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান। সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়েছে এই দরপত্র।

এনসিটিতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের আলোচনা। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ারটেক এনসিটি পরিচালনা করে এলেও, তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বর্ধিত চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মাসে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে। পরিকল্পনা ছিল, নতুন করে আন্তর্জাতিক মানের একটি বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দিয়ে বন্দরের কার্যক্রমকে আরও গতি দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকেই এনসিটির পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করলেও, এতে সামনে এসেছে নীতিগত জটিলতা, অর্থনৈতিক চাপ এবং পরিচালনাগত সক্ষমতার প্রশ্ন।

কেন পিছিয়ে গেল বিদেশি অপারেটর?

নতুন অপারেটর নিয়োগের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া গত বছরের শেষ দিক থেকেই চলমান। তবে টেকনিক্যাল ও প্রশাসনিক নানা কারণে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এদিকে বিদ্যমান অপারেটরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এনসিটির কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ফলে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়।

অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

বন্দর কর্তৃপক্ষের এই অন্তর্বর্তী দায়িত্ব নিতে হলে প্রয়োজন হবে প্রায় ৪২ কোটি টাকার সরাসরি বিনিয়োগ। এর মধ্যে রয়েছে ট্রাক্টর ট্রেইলার, প্রাইম-মুভার, জ্বালানি, চালক, হেলপার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সেবা। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ২৫ জুন প্রকাশিত হয়েছে উন্মুক্ত দরপত্র, যার মাধ্যমে সরঞ্জাম ও জনবল সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

এ ধরনের অস্থায়ী বিনিয়োগ ভবিষ্যতে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের পর কার্যকর হবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। কারণ, নতুন অপারেটর আসার সঙ্গে সঙ্গেই এসব যন্ত্রপাতি ও লোকবলের প্রয়োজনীয়তা কমে যেতে পারে।

দক্ষতা ও সক্ষমতার প্রশ্ন

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত দুই দশকে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে অনেক উন্নতি করলেও, সরাসরি কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা সীমিত। এনসিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও চাপপূর্ণ একটি টার্মিনাল পরিচালনার ক্ষেত্রে তা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
তবে ইতিবাচক দিক হলো, এ সময়ের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অন্তর্বর্তীকালীন সময়কে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে পারলে বিদেশি অপারেটরের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনাও সম্ভব। তবে সেটি নির্ভর করছে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি, স্বচ্ছতা এবং দক্ষ পরিচালনার ওপর।

এই পুরো প্রক্রিয়ায় নীতিনির্ধারক মহলের একটি বার্তা স্পষ্ট। তা হলো দেশীয় সক্ষমতা বাড়ানো ও সময়মতো বিকল্প প্রস্তুতি থাকা জরুরি। বিদেশি বিনিয়োগ ও অংশীদারিত্ব থাকুক, তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় শেষ ভরসা যেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠানই হতে পারে।