Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য জ্ঞানচর্চার মুখোশে দাসের দেহ: বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান গবেষণায় নিষ্ঠুরতা

জ্ঞানচর্চার মুখোশে দাসের দেহ: বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞান গবেষণায় নিষ্ঠুরতা

ছবি এ আই

পর্ব-৪

আমিরুল মোমেনিন:

বিজ্ঞান ও বিশ্ববিদ্যালয় শব্দ শুনলেই আমাদের মনে হয় মুক্তচিন্তা, জ্ঞান, মানবকল্যাণের কথা। কিন্তু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর আড়ালে গড়ে উঠেছিল এক ভিন্নতর ভয়াবহতা। আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে ধরে আনা কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের দেহ শুধু কৃষিকাজে নয়, ব্যবহার করা হতো গবেষণার সরঞ্জাম হিসেবে।

১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের নামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অনেকেই—অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, এডিনবরো সহ—দাসদের দেহ ব্যবহারে জড়িত ছিল। চিকিৎসা ও শারীরবিদ্যার ছাত্রদের ‘প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষার’ নামে কৃষ্ণাঙ্গ দেহ কাটাছেঁড়া, খুলি বিশ্লেষণ, চামড়া সংগ্রহ—সবই ছিল এক নিয়মিত চর্চা। অথচ সেইসব মানুষের থেকে কখনোই অনুমতি নেওয়া হয়নি, বরং অনেক সময় দেহ কবর থেকে তুলে আনা হতো গোপনে।

শুধু মৃতদেহই নয়, জীবিত দাসদেরও ব্যবহৃত হতো গবেষণার ‘উপাদান’ হিসেবে। শরীরের উপরে ওষুধ পরীক্ষার নামে চালানো হতো অমানবিক নিরীক্ষা। বিশেষ করে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বসবাসকারী কৃষ্ণাঙ্গদের শরীরকে তখন দেখা হতো ‘উপনিবেশীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরীক্ষাগার’ হিসেবে।

এমনকি রেসোলজি (racial science) নামে গড়ে উঠেছিল এক বিকৃত জ্ঞানের শাখা, যেখানে মানবদেহের আকার ও খুলি মাপজোক করে প্রমাণ করার চেষ্টা চলত যে, কৃষ্ণাঙ্গরা ‘অবিকশিত মানুষ’। এই ধরনের গবেষণার ফলাফল ছাপা হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে, ব্যবহার হতো দাসপ্রথাকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করতে।

আজও অনেক ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের হাড়, দাঁত, মাথার খুলি সংরক্ষিত আছে। সম্প্রতি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গবেষণাতেই দেখা গেছে, তাদের অ্যান্টমি ল্যাবে ১৮ শতকে ৪৫ শতাংশ দেহাংশই ছিল আফ্রিকান ও ক্যারিবীয় দাসদের।

সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ গায়ানার গবেষক ড. এলেনা বার্নেস বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানবতার নামে জ্ঞান অর্জন করেছে, কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ দেহ ব্যবহার করে মানবতার সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে।”


👉 পরবর্তী পর্বে জানুন—ব্রিটেনের যেসব নামকরা পরিবার আজও বিলাসে ডুবে আছে, তাদের শিকড় কীভাবে গাঁথা দাসব্যবসার টাকায়। কে কত টাকা পেয়েছিল দাসমালিক হিসেবে ‘ক্ষতিপূরণ’, তার চমকে দেওয়া দলিলসমূহ।
📢 ইতিহাস জানলেই বদলায় ভবিষ্যৎ। শেয়ার করুন, প্রশ্ন তুলুন—কারণ ন্যায়ের শুরু হয় স্মৃতির দায় থেকে।