বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: আজ বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। বাজেটকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষের মুখে ঘুরছে একটিই কথা—“জীবনটা সহজ হোক”। কেউ চান নিত্যপণ্যের দাম কমুক, কেউবা নিজের আয়টা একটু বাড়ুক। বাজেটের ভাষা হয়তো অনেকের কাছে দুর্বোধ্য, কিন্তু প্রত্যাশা একদম পরিষ্কার।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম গত এক বছরের তুলনায় অনেকটা কমে গেছে। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ এই উন্নতি স্বাগত জানাচ্ছেন। তবে তাদের দাবি, দাম আরও কমিয়ে এনে যেন তাদের জীবনে আর্থিক স্বস্তি বৃদ্ধি পায়। গৃহিণী রোকেয়া বেগম বলেন, “দামের এই পতন আমরা অনেকদিন ধরে দেখতে চাইছিলাম। এখন যদি আরও কমে যায়, তাহলে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে আমাদের আরও সুবিধা হবে।”
“বাজেট বুঝি না ঠিকঠাক, তবে আমার আশা হচ্ছে আয় একটু বাড়বে আর বাজারের দাম কমবে। দিনে যত আয় করি, তার বেশিরভাগই চলে যায় খাবার-দাবারে। তাই সরকার যেন আমাদের মতো গরিব মানুষের কথা ভাবে।”–এই প্রত্যাশা ফিরিঙ্গিবাজারের রিকশাচালক আবুলের।
পতেঙ্গা এলাকায় সিএনজি ট্যাক্সিচালক রহিম উল্লাহর কথা আরও সোজাসাপ্টা, “বাজেট-মাজেট বুঝি না। আমি চাই দিনে দুইশ টাকা বেশি কামাই হউক। এখন যা আয় করি, খরচ দিয়া সব ফুরায় যায়। তেলের দাম বাড়লে আমাদের ভাড়া বাড়ে, যাত্রী কমে যায়। তাই সরকারের কাছে চাই, যেন জিনিসপত্রের দাম কমে।”
আলকরণ এলাকায় ঠেলাগাড়ি ঠেলে শাকসবজি বিক্রি করেন লাল মিয়া। তিনি বললেন, “মানুষ এখন তেমন কেনে না। বিক্রি কমে গেছে। বাজেটে যদি ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু সুবিধা থাকে, যেমন সহজ ঋণ, তাইলে আমরাও একটু ঘুরে দাঁড়াতে পারি।”
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ও খাতুনগঞ্জে একটি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন কাজ করা সুমাইয়া নূর বলেন, “চাকরিজীবীদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো দরকার। ঢাকায় যেমন কস্ট, চট্টগ্রামেও খরচ কিছু কম না। যাঁরা সীমিত বেতনে চাকরি করেন, তাঁদের কথা বাজেটে আসা উচিত।”
বাঁশখালীর কৃষক জহির উদ্দিনের মুখে উঠে এলো সারের দাম ও খরচের কথা। বললেন,“আমাদের জন্য বাজেট মানে হলো সার, বীজ আর যন্ত্রপাতির দাম যেন সস্তা হয়। আমরা ফসল উৎপাদন করি, কিন্তু খরচ অনেক বেশি। যদি সরকার কৃষকদের জন্য কিছু সহজ ব্যবস্থা নেয়, তবে আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারব।”
বোয়ালখালীর গার্মেন্টস শ্রমিক রিনা আক্তার বলেন, “চট্টগ্রামে বাসাভাড়া বাড়ছে, খাবারের দাম বাড়ছে, কিন্তু বেতন বাড়ছে না। আমরা চাই যেন সরকার ন্যূনতম মজুরি বাড়ায়।”
আগ্রাবাদে ব্যবসা করেন মো. রফিক, যিনি পণ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, “ব্যবসার খরচ বাড়তেছে। ডলারের দাম, পোর্ট ফি, কর সবকিছুই বাড়তেছে। বাজেটে যেন শিল্প-ব্যবসায়ীদের জন্য কর হ্রাস ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা থাকে।”
বন্দর নগরীর এক রাজনৈতিক নেতাও বাজেট নিয়ে মত দেন। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম হচ্ছে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। এই শহরের অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, বন্দর সুবিধা সব কিছুতেই বাজেটে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”
চট্টগ্রামের মানুষের প্রত্যাশা তাই স্পষ্ট: নিত্যদিনের জীবন হোক সহজ, আয় বাড়ুক, ব্যয় কমুক, আর সরকার যেন তাঁদের কথাও বাজেটে শোনে।