বিজনেসটুডে২৪ প্র্রতিনিধি, লালমনিরহাট: লালমনিরহাটে উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৯টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২০ মিটার, যা স্বাভাবিক বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার থেকে বেশি।
পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তিস্তার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের বহু ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে বন্যা ও নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, ভোর থেকেই পানি দ্রুত বাড়তে থাকায় মানুষজন জরুরি জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার অন্তত ৬টি ইউনিয়নের ৮ থেকে ১০টি চর ও নিম্নাঞ্চলের গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এর ফলে শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং স্কুল-কলেজে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তিস্তার দুই তীরের গ্রামগুলোতে নৌকাই এখন প্রধান যাতায়াত মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে, যাতে পানির চাপ কমানো যায়।
নদীর পানি বৃদ্ধির বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, পানি বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত থাকলে নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে। স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে এবং মানুষকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পূর্ববর্তী বছরের বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতির প্রেক্ষাপট
তিস্তা নদী বন্যা প্রবণ এলাকায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে তিস্তার পানি প্রায় এক সপ্তাহ বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হয়েছিল, যার ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরের অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলি জমি, বিশেষ করে আউশ ধান, পাট ও সবজি ক্ষেত প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর পানিতে তলিয়ে যায়।
এছাড়া ২০২২ সালেও বর্ষাকালে পরপর তিন দফা বন্যায় লালমনিরহাট জেলার প্রায় ৮০টি গ্রাম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন নদীভাঙনে শত শত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে এবং বহু পরিবারকে নদীর তীরে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকতে হয়।
বন্যা মোকাবিলায় উদ্যোগ
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা, শুকনো খাবার মজুত ও চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও নৌকা ও লাইফ জ্যাকেট প্রস্তুত রেখেছে। বিশেষ সতর্কতা হিসেবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গ্রামভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত ও দুর্যোগকালীন জরুরি যোগাযোগ নম্বর প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিস্তা নদীর এই অব্যাহত পানি বৃদ্ধি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা, যদি আগামী কয়েকদিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকে।










