Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য ক্ষতিপূরণ পেল যারা অপরাধী, বঞ্চিত রইল যারা শিকার

ক্ষতিপূরণ পেল যারা অপরাধী, বঞ্চিত রইল যারা শিকার

ছবি এআই

পঞ্চম ও শেষ পর্ব

আমিরুল মোমেনিন: দাসপ্রথা নিছক ইতিহাসের পাতায় ধুলো পড়ে থাকা কোনো অধ্যায় নয়। এটি এমন এক উত্তরাধিকার, যার ছায়া এখনও বর্তমান ব্রিটিশ সমাজে বিস্তৃত। আজ যেসব পরিবার ধনকুবের, যেসব ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সমাজের অভিজাত—তাদের অনেকের উত্থানের মূল ছিল দাসব্যবসা। কিন্তু সেই কথাগুলো আজও আড়ালে রেখে গড়ে তোলা হয়েছে ইতিহাসের এক পক্ষপাতদুষ্ট পাঠ।

১৮৩৩ সালে যখন ব্রিটেন দাসপ্রথা বাতিলের ঘোষণা দেয়, তখন প্রায় আট লাখ দাসকে ‘মুক্ত’ করা হয়। তবে এই মুক্তির বিনিময়ে সরকার কোনো দাসকে নয়, বরং দাসমালিকদের প্রায় দুই কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেয়। আজকের হিসাবে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দশ বিলিয়ন পাউন্ডে।

এই ক্ষতিপূরণ পেয়েছে এমন অনেক পরিবারের নাম জানা গেছে সরকারি রেকর্ড থেকে। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পরিবার, বিখ্যাত লেখক জর্জ অরওয়েলের পূর্বপুরুষ, এমনকি লন্ডনের অনেক অভিজাত ব্যাংকও এই ক্ষতিপূরণের অংশীদার ছিল।

২০১৫ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন প্রকাশ করে একটি বিশদ তালিকা, যেখানে দেখা যায়, প্রায় ৪৬ হাজার মানুষ ক্ষতিপূরণ নিয়েছে দাসমালিকানা হারানোর জন্য। অথচ এই তালিকায় একজন দাসও ছিল না।

আর যারা যুগের পর যুগ জুলুম সহ্য করেছে, তাদের জন্য ছিল না কোনো দুঃখপ্রকাশ, ছিল না আইনি পুনর্বাসন বা অর্থনৈতিক সমতা নিশ্চিতের উদ্যোগ। তারা শুধু হয়ে গেছে ইতিহাসের এক গুম হয়ে যাওয়া চরিত্র কারও মুখে নাম নেই, কোথাও নেই তাদের বংশধরদের দায় স্বীকার।

আজও অনেক ক্যারিবীয় বা আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক অর্থনৈতিক বৈষম্যে ভোগে, শিকড়চ্যুতি ও সাংস্কৃতিক হীনমন্যতায় বিপর্যস্ত। অথচ এই রাষ্ট্র কখনো বলেনি “আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”

কোনো কোনো ক্যারিবীয় রাষ্ট্র ক্ষতিপূরণ দাবি করলেও ব্রিটিশ সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে দাসপ্রথার জন্য ক্ষমা চায়নি।

এটাই বাস্তবতা যে সমাজ দাসদের রক্ত-ঘামে গড়ে উঠেছে, সেই সমাজ আজও তাদের উত্তরসূরিদের প্রান্তিক করে রেখেছে।

👉 দাসপ্রথার এই অন্ধকার অধ্যায় শুধু ইতিহাস নয়, এটি বর্তমানেরও প্রতিচ্ছবি। এই সিরিজ শেষ হলেও প্রশ্ন রয়ে যায়—ক্ষমা না চাইলে ইতিহাস কি ক্ষমা করে?
📢 শেয়ার করুন এই সিরিজ, আওয়াজ তুলুন ন্যায়বিচারের জন্য। কারণ নীরবতা মানেই অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান।