Home বিনোদন আমি যেমন, তেমনই সুন্দর: নাদিয়া আফগান

আমি যেমন, তেমনই সুন্দর: নাদিয়া আফগান

নাদিয়া আফগান

বিনোদন ডেস্ক:গায়ের রং ধবধবে ফর্সা হতে হবে, শরীরে থাকতে পারবে না একবিন্দু বাড়তি মেদ, আর ত্বক হতে হবে কাঁচের মতো স্বচ্ছ—পাকিস্তানি বিনোদন জগতে একজন ‘হিরোইন’ হওয়ার জন্য এই অলিখিত নিয়মগুলোই এখন প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই তথাকথিত ‘পারফেক্ট’ লুকের পেছনে ছুটতে গিয়ে তরুণীরা যে মানসিক ও শারীরিক চাপে পিষ্ট হচ্ছেন, তা নিয়ে এবার সরব হয়েছেন অভিজ্ঞ অভিনেত্রী নাদিয়া আফগান।

মেকআপহীন ক্যামেরায় আসল রূপ

সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে নাদিয়াকে দেখা যায় একেবারে ঘরোয়া লুকে, হাতে সকালের চায়ের কাপ। কোনো মেকআপ বা ফিল্টার ছাড়াই ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি তার চেহারার তথাকথিত ‘খুঁত’গুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমার হাতে বলিরেখা আর দাগ আছে, চোখের নিচে ভাঁজ পড়েছে, এমনকি ভ্রুর কিছু চুলও পেকে গেছে। তা সত্ত্বেও আমি মনে করি আমি অত্যন্ত সুন্দরী এবং আমি আমার ত্বক ও চেহারা নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী।”

নতুনদের ওপর ‘অপ্রয়োজনীয় চাপ’

নাদিয়া অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে জানান যে, বর্তমান সময়ে অত্যন্ত মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত তরুণীরাও তাদের চেহারা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন। শোবিজে পা রাখা নতুন অভিনেত্রীদের ওপর চাপ দেওয়া হয় গালের মেদ কমানোর জন্য, উচ্চতা বাড়ানো কিংবা স্লিমিং ট্রিটমেন্টের জন্য। তাদের বোঝানো হয়, একটি নির্দিষ্ট ছাঁচে না পড়লে তারা কখনোই কেন্দ্রীয় চরিত্রে (লিড রোল) সুযোগ পাবেন না।

নাদিয়া এই পরিস্থিতির সমালোচনা করে বলেন, “টেলিভিশনের পর্দায় কাউকে নিখুঁত দেখায় কারণ সেখানে টন টন মেকআপ, ফিল্টার আর দুর্দান্ত লাইটিং থাকে। বাস্তবে কেউই নিখুঁত নয়।”

নিজের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি

নিজের জীবনের উদাহরণ টেনে নাদিয়া জানান, এক সময় তিনি নিজেও এই চাপে পড়ে চোখের নিচে ‘ফিলার’ করিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বুঝতে পারেন, চোখের নিচের সেই ফোলাভাব আসলে আয়রনের অভাবজনিত কারণে হয়েছিল। সামান্য সাপ্লিমেন্টেই যা সেরে যেত, তার জন্য তিনি কৃত্রিম চিকিৎসার আশ্রয় নিয়েছিলেন।

মেনোপজ বা রজোনিবৃত্তির সময় ওজন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি জানান, তিনি ওজন কমানোর চেষ্টা করেছেন নিজের স্বাস্থ্যের (ডায়াবেটিস ও জয়েন্টের সমস্যা) কথা ভেবে, কোনো সিনেমার গানে শাড়ি পরে নাচার জন্য নয়।

নাদিয়ার মূল বার্তা:
  • নিজের প্রতি ভালোবাসা: অন্যের মতো হওয়ার চেষ্টা না করে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখা।
  • অভিনয়ে গুরুত্ব: রূপের চেয়ে প্রতিভা এবং অভিনয় দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া।
  • স্বাস্থ্য সচেতনতা: ডায়েট বা না খেয়ে থাকা নয়, বরং পর্যাপ্ত ঘুম এবং পুষ্টিকর খাবার খেয়ে সুস্থ থাকা।
  • বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি: সবাই আলাদা এবং প্রত্যেকের আলাদা জীবনযাত্রাই তাকে সুন্দর করে তোলে।

নাদিয়া আফগানের এই ভিডিওটি শোবিজ অঙ্গনের সেই অন্ধকার দিকটি উন্মোচন করেছে যেখানে প্রতিভার চেয়ে বাহ্যিক রূপকে বড় করে দেখা হয়। তরুণ তারকাদের প্রতি তার শেষ কথা ছিল— “অবশ্যই ভালো পোশাক পরুন, নিজেকে সুন্দর দেখাক তা চান; কিন্তু তথাকথিত ‘পারফেক্ট ফিগার’ পাওয়ার নেশায় নিজেকে ক্ষুধার্ত রেখে কষ্ট দেবেন না।”


আপনি কি মনে করেন শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির এই পরিবর্তনের জন্য দর্শকদের মানসিকতাও দায়ী? এ বিষয়ে আপনার ভাবনা আমাদের জানাতে পারেন।