Home চট্টগ্রাম চেরাগী পাহাড়ের ফুলের বাজার: চট্টগ্রামের রঙিন প্রাণকেন্দ্র

চেরাগী পাহাড়ের ফুলের বাজার: চট্টগ্রামের রঙিন প্রাণকেন্দ্র

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের ইতিহাস, রাজনীতি ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল মিলনস্থল চেরাগী পাহাড়। একসময় শুধুই সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের আড্ডার কেন্দ্র বলে পরিচিত হলেও আজকাল এ জায়গা নতুন এক পরিচয় পেয়েছে—ফুলের রাজ্য হিসেবে।

চেরাগী মোড় ও আশপাশের এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে ফুলের এক জমজমাট বাজার। সকালে অফিসের টেবিলে রাখার জন্য বা সন্ধ্যায় কারও মুখে হাসি ফোটাতে, এমনকি ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্যও এখানে প্রতিদিন ফুল কিনতে ভিড় করেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

এই বাজারে পাওয়া যায় গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, লিলি, অর্কিডসহ নানা রকমের দেশি-বিদেশি ফুল। চট্টগ্রামের নিজস্ব এলাকা যেমন চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া কিংবা কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে এসব ফুল আসে। পাশাপাশি যশোরের বিখ্যাত গদখালি এবং বিদেশ থেকেও আমদানি হয় দৃষ্টিনন্দন কিছু ফুল।

বিশেষ দিনে যেমন ভালোবাসা দিবস, বসন্ত উৎসব বা একুশে ফেব্রুয়ারিতে এই বাজারে ফুলের বিক্রি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। একেক দোকানে সেদিন লক্ষাধিক টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। এমন সময় এক পা ফেলার জায়গা থাকে না—ক্রেতা, সজ্জা আর সুবাসে ভরে ওঠে গোটা এলাকা। তবে শুধু বিশেষ দিন নয়, প্রতিদিনই এখানে ফুলের ভালোই বেচাকেনা চলে।

ফুল বিক্রেতারা অবশ্য একটা সমস্যা নিয়ে বেশ চিন্তিত—তা হলো প্লাস্টিক ফুলের বাড়বাড়ন্ত। এগুলোর দাম কম, টেকসইও বটে, কিন্তু এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা। অনেকেই দাবি তুলেছেন, এসব কৃত্রিম ফুল আমদানির বিরুদ্ধে কড়াকড়ি আরোপের।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন গাড়িভর্তি ফুল আসে চেরাগী পাহাড় মোড়ের বাজারে। বিপুল পরিমাণ ফুল অবিক্রিত থেকে যায়, সকাল হলে তা চলে যায় ডাস্টবিনে।

এই ফুলের বাজার কেবল বাণিজ্য নয়, বরং চেরাগী পাহাড়ের সাংস্কৃতিক আবহেরই এক সম্প্রসারণ। এখানে সন্ধ্যা নামে কফির কাপে আড্ডা দিয়ে, কবিতা পড়ে, গান গেয়ে, পোস্টার ছেঁটে কিংবা শুধু ফুল হাতে পথচলা মানুষদের মিলনে।

চেরাগী পাহাড়ের ফুলের বাজার এক অর্থে চট্টগ্রামের হৃদস্পন্দনেরই প্রতিচ্ছবি। এখানে ফুল শুধু বাণিজ্যের বস্তু নয় এ যেন জীবনের রঙ, ভালোবাসার ভাষা আর সংস্কৃতির প্রতীক।

ফুল, বিশেষ করে কাঁচা ফুল, একদিনের জন্য ফ্রেশ থাকে। পরদিন, বিক্রি না হলে, সেই ফুল দ্রুত পঁচে যায় এবং তার বাজারমূল্য কমে যায়। এরপর, ব্যবসায়ীরা সেই ফুল নষ্ট হলেও বা পঁচে যাওয়ার পরও তা কম দামে বিক্রি করার চেষ্টা করেন। তবে এই বিক্রির পরও অনেক ক্ষেত্রে ফুলের অবশিষ্টাংশ শেষ পর্যন্ত ডাস্টবিনে চলে যায়, যার মানে হলো এই বাণিজ্য শুধু লাভজনক নয়, বরং ক্ষতিরও একটা অংশ রয়েছে।