বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ানোর জেরে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয় আইন অমান্য করে সভা-সমাবেশ ও প্রচারণা চালানোর অভিযোগে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি আটক হয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস আজ (১৭ ডিসেম্বর ২০২৫) এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
রিয়াদ দূতাবাসের মিশন উপ-প্রধান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি সৌদি আরবের বিভিন্ন ইশতেরাহা (রিসোর্ট), হলরুম, হোটেল-রেস্তোরাঁ এমনকি ব্যক্তিগত বাসা-বাড়িতেও বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ আয়োজন করা হচ্ছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলবদ্ধ প্রচার-প্রচারণা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়েছে।
দূতাবাস নিশ্চিত করেছে যে, সৌদি কর্তৃপক্ষের যথাযথ অনুমোদন ছাড়া এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার কারণে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে কতিপয় বাংলাদেশিকে আটক করেছে।
কেন এই কঠোরতা?
সৌদি আরবের আইন ও বিচার ব্যবস্থা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা বিক্ষোভের বিষয়ে অত্যন্ত কঠোর। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, মিছিল-মিটিং বা দলবদ্ধ জমায়েত নিষিদ্ধ।
১. জিরো টলারেন্স নীতি: সৌদি আরব তার ভূখণ্ডে অন্য কোনো দেশের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিকে কখনোই বরদাস্ত করে না। প্রবাসীরা যখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে সৌদি আরবের মাটিতে শোরগোল করেন, তখন তা স্থানীয় আইনের সরাসরি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়।
২. সামাজিক মাধ্যমের ওপর নজরদারি: বিজ্ঞপ্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘অপরাধমূলক ও বিভ্রান্তিকর’ তথ্য প্রচারের বিষয়টিও উঠে এসেছে। সৌদি আরবের সাইবার ক্রাইম আইন অত্যন্ত কড়া। প্রবাসীরা অনেক সময় আবেগের বশবর্তী হয়ে ফেসবুকে বা অন্যান্য মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী বা উসকানিমূলক পোস্ট দেন, যা সৌদি সাইবার পুলিশের নজরদারিতে ধরা পড়ছে।
প্রবাসীদের জন্য ঝুঁকি ও করণীয়
দূতাবাসের এই সতর্কতা কেবল একটি বিজ্ঞপ্তি নয়, বরং প্রবাসীদের জন্য বড় ধরনের বিপদ সংকেত।
আইনি জটিলতা: আটককৃতদের জেল-জরিমানা, এমনকি দেশে ফেরত পাঠানো (ডিপোর্টেশন) হতে পারে। এতে তারা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি তাদের পরিবারও বিপদে পড়বে।
শ্রমবাজারের ওপর প্রভাব: কতিপয় প্রবাসীর অসচেতন ও আবেগপ্রসূত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটি ও শ্রমবাজারের ওপর। এতে সৌদি নিয়োগকর্তাদের কাছে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
দূতাবাসের আহ্বান
এমতাবস্থায়, রিয়াদ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশিদের সৌদি কর্তৃপক্ষের অনুমোদনবিহীন যেকোনো সভা-সমাবেশ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে। একইসঙ্গে সৌদি আরবের আইন-কানুন ও বিধি-বিধান মেনে চলার জন্য কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের মনে রাখা জরুরি যে, জীবিকার সন্ধানে বিদেশে এসে দেশের রাজনীতি নিয়ে অতি-উৎসাহ প্রদর্শন নিজের এবং দেশের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com










