বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: দীর্ঘ সময় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং মাঠে থাকবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত জনগণ ও দলের উপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান বলেন, “নির্বাচন যেখানে জনগণের সম্পৃক্ততা থাকবে, সেখানে আমি দূরে থাকতে পারবো না। ইনশাআল্লাহ মাঠেই থাকবো। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে, আমি না।”
খালেদা জিয়ার ভূমিকা ও স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ
মা ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে খালেদা জিয়ার অবদান অনস্বীকার্য। তবে তাঁর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নির্বাচনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার বিষয়টি নির্ভর করবে তাঁর ফিজিক্যাল এবিলিটির উপর।”
বিএনপির নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব
দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন,
“রাজনীতি পরিবারকরণ নয়, এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। যে সংগঠিত করতে পারে, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে, দলকে এগিয়ে নিতে পারে, তিনিই নেতৃত্ব দেবেন।”
নিজের পরিবার, স্ত্রী বা কন্যা রাজনীতিতে আসবেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, “সময় পরিস্থিতি বলে দেবে।”
বিএনপির অগ্রাধিকার ও নতুন ভাবনা
২০০১-২০০৬ মেয়াদের পর প্রায় ১৯ বছর পর বিএনপির সম্ভাব্য সরকার গঠনের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন,
“বিশ্ব এখন পরিবর্তিত। কোভিড-পরবর্তী সময় ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব রাজনীতিকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। আমাদের মূল অগ্রাধিকার থাকবে মানুষের ‘বেটারমেন্ট’, অর্থাৎ নাগরিক জীবনের উন্নতি।”
দুর্নীতি প্রশ্নে ব্যাখ্যা
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের আগে টিআইবির সূচক প্রকাশ হয়েছিল। সেটি পূর্ববর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতেই তৈরি হয়। এরপরের বছরগুলোতে সূচক কমেছে।
আমরা স্বীকার করি দুর্নীতি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, তবে ধীরে ধীরে সংস্কারের মাধ্যমে এটি কমানো সম্ভব। ভোটারদের আশ্বস্ত করতে চাই, সুযোগ পেলে আমরা কাজ দিয়ে প্রমাণ করব।”
চাঁদাবাজি ও দখলের অভিযোগ
বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক চাঁদাবাজি ও দখলের অভিযোগ সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন,
“আমরা প্রায় ৭০০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি, তবে সব অভিযোগ একই প্রকৃতির নয়। কিছু ঘটনা রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
রাজনৈতিক দলের কাজ পুলিশিং নয়, সেটি সরকারের দায়িত্ব। বিএনপি সরকারে এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ স্বাধীনভাবে করবে। কোনও নেতাকর্মী অনৈতিক কাজে জড়ালে দল তার পাশে থাকবে না।”
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে মত
সাম্প্রতিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে তারেক রহমান বলেন,
“এটি গণতান্ত্রিক যাত্রার একটি ভালো সূচনা। তবে আমরা চাই ভবিষ্যতে এসব নির্বাচন বিতর্কবিহীন হোক।”
জাতীয় রাজনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে তিনি বলেন, “ছাত্র রাজনীতি ছাত্র রাজনীতির জায়গায়, জাতীয় রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির জায়গায়। একে অপরের প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না।”
বিবিসি বাংলার এই সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান ইঙ্গিত দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে তিনি সক্রিয় থাকবেন, তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়া বা দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ ও দলের হাতে। দুর্নীতি দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও গণতান্ত্রিক সংস্কার, এগুলোই হবে বিএনপির মূল অঙ্গীকার।