বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষা। দলের ঘোষিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ এবং ‘জুলাই জাতীয় সনদের’ সমন্বয়ে ইশতেহারের সকল কাজ ইতিমধ্যেই সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এখন একটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের মাধ্যমে দল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে নিবিড় আলোচনা করে ইশতেহারে আরও পরিবর্তন, সংযোজন-বিয়োজন আনবে এবং তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ঘোষণা করবে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো এই তথ্য জানিয়েছে।
ইশতেহারে প্রাধান্য পাচ্ছে যা:
ইশতেহার তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মানবজমিনকে জানিয়েছে, এবারকার ইশতেহারে ফ্যামিলি কার্ড, কৃষি কার্ড, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, পরিবেশ, এবং খতিব-ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মাসিক সম্মানী বিশেষভাবে প্রাধান্য পাবে। এছাড়াও, বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, বাক-স্বাধীনতা, স্বচ্ছ প্রশাসন ও জাতীয় অর্থনীতি পুনরুদ্ধার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অন্যদিকে, জুলাই সনদের আলোকে মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা দেওয়ার কর্মপরিকল্পনাও ইশতেহারে থাকবে।
বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা জানান, দেশ গড়ার পরিকল্পনার যে কর্মসূচি বিএনপি করছে সেখানে মূলত তারুণ্যের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, ফ্যামিলি কার্ড, পরিবেশ – এগুলো মূল প্রাধান্য পাচ্ছে। এর বাইরে সুশাসন, রাষ্ট্র কাঠামো, জবাবদিহিতা গুরুত্ব পাবে। সূত্রটি আরও জানায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠন, মানবাধিকার রক্ষা, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ এবং দুর্নীতিবিরোধী কাঠামো শক্তিশালীকরণ ইশতেহারের মূল বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকারগুলো এক নজরে:
ফ্যামিলি কার্ড: প্রতি মাসে ২০০০-২৫০০ টাকার আর্থিক সহায়তা অথবা চাল, ডাল, তেল, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সুবিধা দেওয়া হবে।
কৃষি কার্ড: ন্যায্যমূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক, সরকারি ভর্তুকি ও প্রণোদনা, স্বল্প মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতি সুবিধা, স্বল্প ব্যয়ে সেচ সুবিধা, সহজ শর্তে কৃষি ঋণ, কৃষি বীমা সুবিধা, ন্যায্যমূল্যে কৃষি পণ্য বিক্রয়ের সুবিধা, কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ, মোবাইলে আবহাওয়া ও বাজার তথ্য, মোবাইলে ফসলের চিকিৎসা সুবিধা। মৎস্যচাষী ও প্রাণিসম্পদ খামারিরাও এই কার্ডের সুবিধা পাবেন।
সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ: দেশের প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা হবে। দেশজুড়ে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নতুন করে প্রায় এক লাখ স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, যার ৮০ ভাগ হবেন নারী। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি মহানগর ও জেলা শহরে বসবাসকারী সকল নাগরিকের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে।
আনন্দময় শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তি: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আধুনিক ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ এবং ট্যাবলেট কম্পিউটার প্রদান।
- প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন।
- ক্লাস সিক্স থেকে টিম-ওয়ার্ক, পার্সোনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট, পারিবারিক, সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষাকে আনন্দময় করে তোলা হবে।
- বাংলা-ইংরেজির পাশাপাশি আরবি, জাপানিজ, কোরিয়ান, ইতালিয়ান, ম্যান্ডারিন ইত্যাদি তৃতীয় ভাষা শিক্ষা মাধ্যমিক পর্যায় থেকে চালু করা।
- মাধ্যমিক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
- ফুটবল, ক্রিকেট, সাঁতার এবং সংগীত, নৃত্য, নাটক ইত্যাদি সাংস্কৃতিক বিষয় পাঠ্যক্রমে যুক্তকরণ।
পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ: সারাদেশে অন্তত ২০ হাজার কিলোমিটার খাল ও নদী খনন-পুনঃখনন, তিস্তা ব্যারেজ উন্নয়ন ও পদ্মা ব্যারেজের মতো প্রকল্প গ্রহণ, ২৫ কোটি গাছ ৫ বছরে রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, এবং সারা দেশে পর্যায়ক্রমে সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে।খতিব, ইমাম-মুয়াজ্জিন ও অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের সম্মান: খতিব, ইমাম-মুয়াজ্জিন সাহেবগণকে মাসিক সম্মানী ও ধর্মীয় উৎসবে বিশেষ ভাতা প্রদান। দক্ষতা-উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়ের প্রধানদেরও মাসিক সম্মানী ও উৎসব ভাতা প্রদান করা হবে।










