Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য দাসদের মাথার খুলি দিয়ে কাপ: ইতিহাসের জঘন্যতম নির্মমতা

দাসদের মাথার খুলি দিয়ে কাপ: ইতিহাসের জঘন্যতম নির্মমতা

আমিরুল মোমেনিন:

একজন মানুষ যখন জীবিত থাকেন, তখন তাঁর দেহ, সম্মান, স্বাধীনতা থাকে। কিন্তু দাসপ্রথার বিভীষিকায় এসবের কিছুই ছিল না। শুধু জীবিত অবস্থায় নয়, মৃত্যুর পরও কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের নিগ্রহ থেকে রেহাই মেলেনি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে অনেক দাসের হাড়গোড়, মাথার খুলি এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, যা সভ্যতার মুখে এক স্থায়ী চপেটাঘাত হয়ে রয়ে গেছে।

ঐতিহাসিক অনুসন্ধান ও প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এমন বহু নিদর্শন পাওয়া গেছে, যেখানে দাসদের মাথার খুলি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে চায়ের পাত্র, ভস্মাধার, এমনকি ধূমপানের পাইপও। লন্ডন, ব্রিস্টল ও অক্সফোর্ডের মতো শহরের পুরনো ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা বা ক্লাবঘরে এমন নজিরও পাওয়া গেছে যেখানে দাসদের হাড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সাজসজ্জার সামগ্রী।

এই নিপীড়ন শুধু শারীরিক নয়, ছিল এক গভীর মনস্তাত্ত্বিক দখলদারিত্ব। একজন মানুষকে শুধু বাঁচা অবস্থায়ই নয়, মরার পরও বস্তুতে পরিণত করার এই প্রবণতা ছিল নিছক বর্ণবাদী দম্ভের প্রকাশ। ইংরেজ সমাজে অনেক সময় দাসদের মাথার খুলি টেবিলে রাখার প্রচলন ছিল—প্রমাণস্বরূপ যে ‘তারা বিজিত, আমরা শাসক’।

ঐতিহাসিক ম্যাথিউ ওয়াটসন ১৯৯৮ সালে ব্রিস্টলের একটি পুরনো অভিজাত পরিবারের সংগ্রহশালায় গবেষণা করতে গিয়ে খুঁজে পান এমন ৯টি কাপ, যেগুলো মানুষের খুলির উপর রুপার প্রলেপ দিয়ে তৈরি। এগুলোর মধ্যে পাঁচটি ছিল ক্যারিবীয় দ্বীপ থেকে আনা দাসদের দেহাবশেষ। প্রত্নতাত্ত্বিক রেবেকা জনসন বলেন, “আমরা কেবল তাদের জীবন কেড়ে নেইনি, মৃত্যুর পরও তাদের বঞ্চিত করেছি মর্যাদা থেকে।”

আরও ভয়াবহ ব্যাপার হলো, ব্রিটেনের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ১৮ ও ১৯ শতকে দাসদের মৃতদেহ নিয়ে চিকিৎসাশিক্ষার প্র্যাকটিস চালাতো। তারা দেহ কাটাছেঁড়া করে ক্লাসে ব্যবহার করত, অথচ অনুমতি তো দূরের কথা, সেই মৃতদের মানুষ বলেই গণ্য করা হতো না।

এই ঘৃণ্য আচরণগুলোর কিছু তথ্য এখনো লুকিয়ে আছে ব্রিটেনের আর্কাইভে। কিছু প্রতিষ্ঠান এগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বললেও, বেশিরভাগই চুপচাপ রাখছে নিজেদের ঐতিহ্যের নামে।


👉 এটা কেবল ইতিহাস নয়, এখনো চলমান অন্যায়ের স্মারক। পরবর্তী পর্বে জানুন কীভাবে ব্রিটিশ আইন নিজেরাই সৃষ্টি করেছিল দাসপ্রথার বৈধতা, এবং কেন মুক্তির নামে দেওয়া হয় ভণ্ডামির আইন।
📢 শেয়ার করুন, প্রশ্ন তুলুন-কারণ ন্যায়ের শুরু হয় স্মরণ ও স্বীকারোক্তি দিয়ে।