হেরেমের সংগীত, শিল্প ও সংস্কৃতির জগৎ
আমিরুল মোমেনিন:
মোঘল হেরেম ছিল শুধু পর্দানশীন নারীদের বাসস্থান নয়, বরং এক অলৌকিক সৌন্দর্যের চর্চাকেন্দ্র। এখানে সৃষ্টি হতো সংগীত, চিত্রকলার নান্দনিকতা, পারফিউমের অদৃশ্য জাদু এবং কাব্যের অমর সুর।
❖ সংগীতের স্বরলিপিতে জীবনের গল্প
মোঘল হেরেমে নিয়মিত সংগীতচর্চা হতো। বিশেষত বাদ্যযন্ত্রের চর্চা—সেতার, সরোদ, তবলা, এবং বাঁশির সুরে প্রতিদিনের সন্ধ্যাকে করা হতো মাদকতাময়। মহিলারা পণ্ডিত বা ওস্তাদদের কাছ থেকে সংগীত শিক্ষা নিতেন। কেউ কেউ ছিলেন নিজ গৃহে সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজনকারী, যেখানে আমন্ত্রিত থাকতেন কেবল নির্দিষ্ট ভক্ত শ্রোতা।
নূরজাহান নিজে একজন সঙ্গীতপ্রেমী ছিলেন। তাঁর গলায় গাওয়া গজল কখনো জাহাঙ্গীরের সভায় শোনা যেত। কিছু হেরেম-নিবাসিনী এমনকি তানসেনের উত্তরসূরিদের কাছে তালিম নেওয়ার সুযোগও পেয়েছিলেন।
❖ চিত্রশিল্প ও হস্তকলা
হেরেমের নারীরা চিত্রাঙ্কনে পারদর্শিতা অর্জন করতেন। বিশেষত মিনিয়েচার পেইন্টিং, ক্যালিগ্রাফি এবং কাপড়ের ওপর সূক্ষ্ম নকশা আঁকার ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় তাঁরা নিজেরাই কবিতা লিখতেন—পারস্য ও উর্দু ভাষায়।
রেশম বোনা, কাঁথার সূচিকর্ম, এবং রুপার অলংকার তৈরির নকশা তৈরি হতো হেরেমের অভ্যন্তরে। সেইসব শৈল্পিক কাজ শুধু হেরেমে সীমাবদ্ধ থাকত না, তা সম্রাটের উপহার হিসেবেও রাজদূতদের হাতে তুলে দেওয়া হতো।
❖ সৌরভ ও গন্ধের ব্যবহার
হেরেমের আরও একটি বিশেষ সংস্কৃতি ছিল আতর বা পারফিউম নির্মাণ। ফুল, মসলা, চন্দন কাঠের নির্যাস দিয়ে তৈরি করা হতো নানা ধরনের গন্ধ। বেগমদের কক্ষে ফুলের জল ছিটানো, কাপড়ে আতর দেওয়া—এমনকি আতরের ‘সংগীতানুষ্ঠান’ আয়োজন করা হতো, যেখানে প্রতি ঘ্রাণের সঙ্গে একেকটি রাগ-মালার সংযোগ থাকত।
❖ সৌন্দর্যচর্চা ও মেহেদির শিল্প
হেরেমে রূপচর্চা শুধু দৈহিক প্রসাধনের জন্য নয়, বরং ছিল এক ধরনের শিল্প। নারীরা বিশেষ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করতেন প্রসাধনী। মেহেদির নকশা, ভ্রু আঁকা, অঙ্গসজ্জা—সবই ছিল সুসংগঠিত ও চর্চিত সংস্কৃতি।
🎶 যেখানে রঙ, সুর ও ঘ্রাণ মিশে তৈরি হয় নারীর স্বাধীন এক রাজত্ব, সেই অদৃশ্য সাম্রাজ্যের নাম মোঘল হেরেম। এখানে নারীরা শুধু প্রেমের প্রতিমা ছিলেন না, ছিলেন শিল্পের স্রষ্টা, সুরের সাধিকা।
👉 পরবর্তী পর্বে জানবেন:
‘নপুংসক প্রহরী ও হেরেমের নিরাপত্তা—কেমন ছিল পাহারার শৃঙ্খল ও নিষ্ঠুরতা?’
📌 চোখ রাখুন বিজনেসটুডে২৪.কম-এ, সিরিজের শেষ পর্ব শিগগিরই।
