Home পর্যটন স্বর্গরাজ্য লামা

স্বর্গরাজ্য লামা

নয়নাভিরাম লামা
ফাতেমা নজরুল স্নেহা:

বান্দরবান এর লামা বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। বান্দরবানের সর্বত্র রয়েছে অনেক খুম, ঝর্ণা, পাহাড়, নদী। আর নীলগিরি, নীলাচলের কথা আমরা সকলেই জানি।

সেরকমই আরেকটি পরিচিত জায়গা হল লামা। কোয়ান্টাম মেথডের জন্য এই লামা’র রয়েছে আলাদা সুনাম। আজকে চলুন বিস্তারিত জেনে আসি বান্দরবানের লামা সম্পর্কে।

লামা এর নামকরণ

সবুজের স্বর্গরাজ্য এই লামা। ১১ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বসবাসনগরী এই লামা। লামা’র নামকরণ নিয়ে রয়েছে মতবিভেদ। মাতামুহুরি নদী সংলগ্ন এলাকার স্থানিয়রা মনে করেন এই কথাই। কেউ বলেন, আহলামা রোয়া বা পাড়া থেকে লামা  এর উৎপত্তি। আবার কেও বলেন লামা অর্থ নিচের দিক বা ভাটি এলাকা, যদিও লামা মূলত একটি চাঁটগাইয়া শব্দ। স্থানীয় কিংবদন্তীরা বলেন ভিন্ন কথা। তাঁদের ভাষ্যমতে, এখনকার লামামুখ  একসময়ে বেশ সম্ভ্রান্ত আহলামা (অর্থ পরমা সুন্দর) নামক এক মারমা উপজাতি বাস করত যার আর্থিক প্রভাব সেই এলাকায় পরে, তার সম্মান রক্ষার্থে এলাকার নামকরণ হয় লামা । বর্তমানে লামা’য় বসবাসরত সকল উপজাতি এবং অউপজাতি বয়োজ্যেষ্ঠরা পরের মতবাদটিই বেশি গ্রহনযোগ্য মনে করেন।

কি আছে এই বান্দরবান এর লামা তে

বান্দরবানের পাহাড়ি রাস্তা সাথে চান্দের গাড়ি – পুরো যাত্রাপথই যেন এক রোমাঞ্চকর অনুভুতি। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তার দুইপাশে তাকালে শুধু সবুজ বনাঞ্চলই চোখে পড়ে। বান্দরবানের পুরোটা জুরেই শুধু পাহাড় আর বন-জঙ্গল। লামা যাওয়ার যাত্রা শুরু হয় চকরিয়া থেকে। পুরো রাস্তাই সবুজের চাদরে মোড়ানো, সর্বক্ষণ মনে হয় যেন স্বর্গের উদ্দেশেই আমাদের যাত্রা।

লামা’র ৭ কিলোমিটার আগে আছে মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স, যা কিছুটা সাজেক ভ্যালি এর মত। মিরিঞ্জা পাহাড়, যেটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ ফিট উপরে, যেখানে রয়েছে মেঘের অবাধ বিচরণ। নিচে রয়েছে একটি ঝর্ণা এবং আশেপাশে রয়েছে আদিবাসীদের টংঘর।

লামা থেকে ৭ কিলোমিটার পরে আছে বিখ্যাত কোয়ান্টাম মেথড স্কুল লামা কোয়ান্টাম স্কুল ও কলেজ । এখানে প্রকৃতির মাঝে থেকে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয় ভিন্ন রকমের জীবন যাত্রা। ঢাকা সহ আরও অন্যান্য জায়গা থেকে নিয়মিত অনেক স্বেচ্ছাসেবক কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এর অধীনে মেডিটেশন এর জন্য লামা যেয়ে থাকেন।

দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আরও আছে লামা বাজার, যেটি পর্যটকদের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। এখানে মিলবে উপজাতিদের হাতে তৈরি করা হরেক রকমের বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী, মিলবে হাতে বানানো ব্যাগ, ঝুড়ি। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকে উপজাতিদের ‘থামি’ নামক বস্ত্র। এছাড়া বাজারে মিলবে পাহাড়ি কলা, পেঁপে, আনারস সহ নানারকমের টাটকা, সতেজ বিভিন্ন ফল  এবং জুম চাষ হতে তৈরি বিভিন্ন শাক সবজি।

বান্দরবানে শুধু লামা’ই নয়, এরকম অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলো একটার থেকে অন্যটা আরও মন জুড়ানো সৌন্দর্যে ভরপুর। সপ্তাখানেক সময় নিয়ে বান্দরবান চলে গেলে চান্দের গাড়ি দিয়ে অনেকটা ঘুরে আসা যায়। বান্দরবানে রয়েছে সবুজের ছোঁয়া সরবত্র, যেখান থেকে ঘুরে আসলে মন প্রফুল্ল হয়ে যায়।