পর্তুগাল যাত্রাই কাল হল!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিদেশ বিভুঁইয়ে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। পর্তুগালে স্থায়ীভাবে বসবাসের আশায় দেশ ছেড়েছিলেন গুজরাটের এক দম্পতি ও তাঁদের তিন বছরের শিশুকন্যা। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই লিবিয়ায় মাঝপথে তাঁদের অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীরা পরিবারের মুক্তির বিনিময়ে দাবি করেছে ২ কোটি টাকা। এই ঘটনায় গুজরাটের মেহসানা জেলা জুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে।
কীভাবে ঘটল এই ঘটনা?
জানা গেছে, অপহৃতরা হলেন মেহসানা জেলার বাসিন্দা কিসমতসিংহ চাভদা, তাঁর স্ত্রী হীনাবেন এবং তাঁদের তিন বছরের ছোট্ট মেয়ে দেবাংশী। কিসমতসিংহের ভাই পর্তুগালে থাকেন। ভাইয়ের কাছে যাওয়ার জন্যই ওই পরিবার পর্তুগাল ভিত্তিক এক ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ২৯ নভেম্বর তাঁরা ভারত থেকে দুবাই পৌঁছন। কিন্তু সেখান থেকেই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। এজেন্ট তাঁদের দুবাই থেকে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে নিয়ে যায়। অভিযোগ, সেখানেই একটি অজানা স্থানে তাঁদের পণবন্দি (Held Hostage) করে রাখা হয়েছে।
২ কোটি টাকার মুক্তিপণ দাবি
বেনগাজিতে আটকে পড়ার পরপরই অপহরণকারীরা মেহসানায় কিসমতসিংহের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা সাফ জানিয়ে দেয়, ২ কোটি টাকা মুক্তিপণ না দিলে ওই দম্পতি ও শিশুকে ছাড়া হবে না। এই খবর পাওয়ার পরেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে চাভদা পরিবার।
প্রশাসনের তৎপরতা
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। মেহসানার পুলিশ সুপার হিমাংশু সোলাঙ্কি জানান, “কিসমতসিংহ চাভদা, তার স্ত্রী এবং মেয়েকে উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে পণবন্দি করা হয়েছে। তাঁরা পর্তুগালে স্থায়ীভাবে বসবাসের উদ্দেশ্যেই যাচ্ছিলেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।”
ভুক্তভোগী পরিবারের আত্মীয়রা গত শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫) মেহসানার জেলা প্রশাসক এসকে প্রজাপতির সঙ্গে দেখা করে বিস্তারিত জানান। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, “বিষয়টি রাজ্য সরকার এবং ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের (MEA) নজরে আনা হয়েছে। অপহৃতদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য সবরকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে।” স্থানীয় বিধায়ক সিজে চাভদাও বিষয়টি নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন।
বারবার একই ফাঁদ?
এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে অবৈধ পথে বা সন্দেহজনক এজেন্টের মাধ্যমে বিদেশ যাত্রার বিপদ। এর আগেও গত অক্টোবর মাসে গান্ধীনগর জেলার একটি গ্রামের দম্পতিসহ চারজন অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে ইরানে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন। সেখানে তাঁদেরও বন্দি বানানো হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত তাঁরা মুক্তি পান।
মেহসানার এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল যে, সঠিক কাগজপত্র ও বৈধ পথ ছাড়া ভিনদেশে পাড়ি দেওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এখন চাভদা পরিবার ও গোটা দেশ তাকিয়ে আছে বিদেশ মন্ত্রকের পদক্ষেপের দিকে—কবে নিরাপদে দেশে ফিরবে ছোট্ট দেবাংশী ও তাঁর বাবা-মা।










