বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: কুয়াশার চাদর আর ভোরের হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। পঞ্জিকার পাতায় অগ্রহায়ণ বিদায় নিচ্ছে, দুয়ারে কড়া নাড়ছে পৌষ। তবে প্রকৃতির নিয়ম মেনে শীত নামলেও এবারের চিত্র গত বছরের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। গত বছর এই সময়ে (১৩ ডিসেম্বর) দেশের কয়েকটি স্থানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেলেও, এবার শীতের তীব্রতা এখনো ততটা প্রকট হয়নি। তবে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, প্রস্তুত হোন—চলতি মাসের শেষ দিকেই দেশজুড়ে হানা দিতে পারে মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ।
উত্তরে কাঁপন, ঢাকায় স্বস্তি
দেশের আবহাওয়ায় এখন বিরাজ করছে দ্বিমুখী আচরণ। দেশের উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের কামড় শুরু হয়ে গেছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া রাজশাহীতে ১২, গোপালগঞ্জ ও যশোরে ১২.২ এবং চুয়াডাঙ্গায় ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব এলাকায় দিনের বেলাতেও মানুষকে মোটা কাপড় পরে বের হতে হচ্ছে।
বিপরীত চিত্র রাজধানী ঢাকায়। গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং চট্টগ্রামে ১৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদদের মতে, ঢাকায় শীত নামতে দেরি হওয়ার মূল কারণ ‘আরবান হিট আইল্যান্ড’ এফেক্ট।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, “ঢাকায় প্রচুর ইঞ্জিনচালিত যানবাহন, গায়ে গায়ে লাগানো বহুতল ভবন এবং পিচঢালা পথের কারণে দিনের তাপ দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকে। সবুজের স্বল্পতা থাকায় এই তাপ রাতেও পুরোপুরি বের হতে পারে না। তবে আগামী ২১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার তাপমাত্রাও কমতে শুরু করবে এবং মাসের শেষে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ দেখা যেতে পারে।”
বিজ্ঞান কী বলছে?
শীতের এই তীব্রতার নেপথ্যে রয়েছে ভৌগোলিক ও আবহাওয়াজনিত কারণ। এই সময়ে বাংলাদেশের আকাশসীমায় ‘জেট বায়ু’ বা তীব্র গতির বাতাস নিচে নেমে আসে, যা ঠাণ্ডা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া উপমহাদেশের উচ্চচাপ বলয়টি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এর বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের সীমানার খুব কাছে থাকায় সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ বেশি অনুভূত হচ্ছে।
জীবনযাত্রায় প্রভাব ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
শীতের আগমনে হাসপাতালগুলোতে বাড়তে শুরু করেছে ভিড়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাপমাত্রার পরিবর্তনে সুপ্ত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠায় শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। সর্দি, কাশি, জ্বরের পাশাপাশি রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগীদের জন্য এই সময়টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।
উত্তরের জেলাগুলোতে মানুষের দৈনন্দিন রুটিনেও এসেছে পরিবর্তন। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে শ্রমজীবী মানুষ বাধ্য না হলে খুব ভোরে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
সামনে পৌষের হাতছানি
বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে পৌষ মাস। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস ঠিক থাকলে, পৌষের শুরু থেকেই শীত তার আসল রূপ দেখাতে শুরু করবে। এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা—উত্তরের হিমেল হাওয়া কবে নাগাদ সারা দেশকে কাঁপিয়ে তোলে।










