Home Second Lead সিলেটে সাদাপাথর লুটপাট: তদন্তে দুদক ও জেলা প্রশাসন সরেজমিনে

সিলেটে সাদাপাথর লুটপাট: তদন্তে দুদক ও জেলা প্রশাসন সরেজমিনে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ভোলাগঞ্জ সাদাপাথরে ব্যাপক পাথর লুটপাটের ঘটনায় মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জেলা প্রশাসন। বুধবার (১৩ আগস্ট) সকালে দুদকের সিলেট অফিসের উপ-পরিচালক রাফী মোহাম্মদ নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে।
দুদকের পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপ-পরিচালক নাজমুস সাদাত বলেন, “যাদের যোগসাজশে নির্বিচারে পাথর লুট হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এ ধরনের লুটপাটে স্থানীয় প্রশাসনের দায় সবচেয়ে বেশি। পর্যটন খাতের ক্ষতির সঙ্গে প্রশাসনের যোগসাজশ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

দুদকের প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। এ সংক্রান্ত প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে তদন্তদল।

জেলা প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ

দুদকের তদন্তের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের নেতৃত্বে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বুধবার সকালে সিলেটভিউকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় জেলা প্রশাসক বলেন,“লুটপাটের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কীভাবে এবং কেন এমন ঘটনা ঘটেছে, তা উদঘাটনের জন্যই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী রবিবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, সাদাপাথর এলাকায় নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ক্রাশার মিল অপসারণ, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রশাসনের দাবি, এক জায়গায় কিছু বিচ্যুতি ঘটলেও অন্যান্য জায়গায় তারা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পেরেছেন।

পটভূমি: লুটপাটের ইতিহাস

ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর শুধু সিলেট নয়, সারা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। এখানকার সাদা পাথরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমায়। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে শুরু হয় পাথর লুটের মহোৎসব।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রথমদিকে ছোট পরিসরে লুটপাট চললেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শেষ কয়েক দিনে লুটেরাদের কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে, এবং সাদাপাথরের পাথর প্রায় পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়া হয়।

সাদাপাথর পর্যটন স্পটের পুরোনো ছবি
প্রভাব ও উদ্বেগ
  • পর্যটন খাতে ধাক্কা: সাদাপাথরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পর্যটক কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
  • অর্থনৈতিক ক্ষতি: পাথর বিক্রি থেকে আয় করা অবৈধ অর্থ স্থানীয় কালোবাজারি অর্থনীতিকে আরও জোরদার করতে পারে।
  • আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি: স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র ও প্রশাসনের যোগসাজশের অভিযোগে সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ

দুদক ও জেলা প্রশাসন উভয়ই আশ্বাস দিয়েছে যে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত শেষ হলে দায়ীদের নাম প্রকাশ করা হবে এবং প্রয়োজন হলে মামলা করা হবে।