বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথাশিল্পী প্রফুল্ল রায় আর নেই। কলকাতার একটি নার্সিং হোমে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন দীর্ঘদিন ধরে।
১৯৩৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন প্রফুল্ল রায়। দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে কলকাতায় চলে আসেন। অভাব-অনটনের মধ্যেও তিনি টিকে ছিলেন সাহিত্যের অনুরাগে। শুরুটা ছোটগল্প দিয়ে হলেও, পরে উপন্যাসেই তিনি নিজের স্বকীয় অবস্থান গড়ে তোলেন।
তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পূর্ব-পার্বতী’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে। এরপর ‘আকাশের নিচে মানুষ’, ‘নোনা জল মিঠে মাটি’, ‘শতধারায় বয়ে যায়’, ‘ক্রান্তিকাল’, ‘উত্তাল সময়ের ইতিকথা’, ‘কেয়া পাতার নৌকো’-র মতো উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে বিশিষ্ট স্থান দখল করে নেয়। তাঁর লেখা প্রায় ১৫০টি উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে।
প্রফুল্ল রায়ের সাহিত্যকর্মে উদ্বাস্তু জীবন, সামাজিক বৈষম্য, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম এবং প্রান্তিক মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। তাঁর কলমে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের বাস্তুচ্যুত বাঙালির দীর্ঘ ইতিহাস এবং তাদের শেকড়হীন জীবনের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর লেখা একাধিক গল্প ও উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র ও নাটক। এর মধ্যে ‘ক্রান্তিকাল’, ‘বাঘ বন্দি খেলা’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘একান্ত আপন’, ‘পিতৃভূমি’ উল্লেখযোগ্য। বাংলা চলচ্চিত্র ও সাহিত্যে তাঁর অবদান ছিল সুগভীর ও প্রভাববিস্তারী।
সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কারসহ একাধিক সম্মাননা লাভ করেন। ‘ক্রান্তিকাল’ উপন্যাসের জন্য ২০০৩ সালে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন তিনি।
প্রফুল্ল রায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “প্রফুল্ল রায় ছিলেন এক যুগান্তকারী কথাসাহিত্যিক। তাঁর লেখায় সামাজিক বাস্তবতা ও মানবিক বোধ গভীরভাবে অনুরণিত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যজগতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
চিরকালের মতো নীরব হলেও প্রফুল্ল রায়ের সাহিত্য বাংলা ভাষাভাষীর হৃদয়ে রয়ে যাবে জীবন্ত। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল।