হেলথ ডেস্ক:
আপনি যদি ত্রিশের কোঠায় থাকেন এবং মনে করেন হাঁটুতে কোনও ব্যথা নেই মানেই তা পুরোপুরি সুস্থ, তবে আবারও ভাবুন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর হাঁটুতে নীরবে শুরু হয়েছে ক্ষয়, যদিও কোনো উপসর্গ নেই।
সম্প্রতি প্রকাশিত Osteoarthritis and Cartilage জার্নালে একটি গবেষণাপত্র জানায়, গড় বয়স ৩৩.৭ বছর বয়সী ২৮৮ জন অংশগ্রহণকারীর হাঁটুতে এমআরআই স্ক্যান করে দেখা যায়—তাঁদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের হাঁটুতে ইতিমধ্যেই কার্টিলেজ ক্ষয় বা হাড়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধির লক্ষণ রয়েছে, যদিও তাঁদের অধিকাংশই ব্যথা অনুভব করেন না।
কী বলছে গবেষণার তথ্য?
৫৬.২ শতাংশের হাঁটু ও উরুর সংযোগস্থলে (patellofemoral joint) কার্টিলেজ ক্ষয় ছিল
২৫.৩ শতাংশের ছিল উরু ও পায়ের পাতার সংযোগস্থলে (tibiofemoral joint) ক্ষয়
১১.৮ শতাংশের স্ক্যানে ধরা পড়ে সম্পূর্ণ গভীরতায় কার্টিলেজ ক্ষতি
৫০ শতাংশের বেশি স্ক্যানে দেখা যায় ছোট বা সন্দেহজনক হাড়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধি (osteophyte)
বিশেষ দিক হলো, উপরের এই পরিবর্তনগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও ব্যথা বা উপসর্গ ছিল না। অর্থাৎ, নীরবেই এগোচ্ছে হাঁটুর ক্ষয়।
গবেষণায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, উচ্চ বডি মাস ইনডেক্স বা শরীরের অতিরিক্ত ওজন হাঁটুর ক্ষয় ত্বরান্বিত করে। যারা ভারী শরীরের অধিকারী, তাঁদের স্ক্যানে বেশি কার্টিলেজ ক্ষয় ও হাড়ের অস্বাভাবিক গঠন দেখা গেছে।
এছাড়াও কিছু অন্যান্য সহায়ক কারণ চিহ্নিত হয়েছে:
রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের উচ্চমাত্রা: গাউট বা বিপাকজনিত সমস্যার ইঙ্গিত
উচ্চ রক্তচাপ: সরাসরি সম্পর্ক প্রমাণ না মিললেও বিপাক সমস্যা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে
পরিবারে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ইতিহাস: কার্টিলেজ পাতলা হওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে
তরুণ বয়সেই কেন হাঁটুর ক্ষয়?
সাধারণভাবে হাঁটুর সমস্যা বৃদ্ধ বয়সে হয়—এই ধারণা ভুল প্রমাণ করছে বর্তমান জীবনযাপন। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ও অতিরিক্ত ওজন আজকের তরুণদের শরীরে বয়সের আগেই যৌথ সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কোনো উপসর্গ না থাকলেও সতর্ক হোন
গবেষকরা জানিয়েছেন, নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলেই হাঁটুর ওপর চাপ পড়ছে ধরে নেওয়া যায়:
সকালে বা দীর্ঘ সময় বসার পর হাঁটু শক্ত লাগা
হাঁটুতে ক্লিক, পপ বা অস्थিরতা অনুভব
ব্যায়ামের পর অল্প ব্যথা বা ফোলাভাব
এখনই জীবনধারা বদলান
হাঁটুর কার্টিলেজ একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আর আগের মতো হয় না। তবে ক্ষয় প্রতিরোধ বা ধীর করা সম্ভব। তাই এখন থেকেই কিছু পরিবর্তন জরুরি:
ওজন কমান: প্রতিটি অতিরিক্ত কেজি হাঁটুতে ৩-৫ গুণ বেশি চাপ ফেলে
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন: যেমন সাঁতার, সাইক্লিং, যোগ
হাঁটুর চারপাশের পেশি শক্ত করুন: হাঁটু স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে
রক্তচাপ ও ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করুন
আজ যারা ব্যথামুক্ত, দশ বছর পর তাঁরাই হাঁটুর অসহ্য যন্ত্রণায় পড়তে পারেন এই গবেষণা যেন ত্রিশোর্ধ্বদের জন্য এক সতর্ক সংকেত। হাঁটু যখন নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন এখনই সময় ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর পরিবর্তনের। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে ভবিষ্যতে হাঁটু রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।