Home First Lead জনসমুদ্রে শেষ বিদায়

জনসমুদ্রে শেষ বিদায়

 হাদির জানাজায় লাখো মানুষের অশ্রুসিক্ত শপথ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: শীতের তপ্ত দুপুরে আজ রাজধানী যেন থমকে গিয়েছিল। যে রাজপথ দিয়ে কয়েক মাস আগে জুলাই অভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছিলেন শরিফ ওসমান হাদি, আজ সেই রাজপথ দিয়ে তিনি ফিরলেন—তবে কফিনে চড়ে। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো জনতার উপস্থিতিতে সম্পন্ন হলো এই বিপ্লবীর জানাজা। মানুষের ভিড় সংসদ চত্বর ছাড়িয়ে খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধানের উপস্থিতি

বেলা বাড়ার সাথে সাথেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবন এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। রাষ্ট্রীয় শোকের দিনে শহীদ হাদির কফিন যখন আনা হয়, তখন চারদিকে এক গুমোট শোকের পরিবেশ বিরাজ করছিল।

বড় ভাইয়ের ইমামতি ও একটি ‘বিপ্লবী’ নামের গল্প

জানাজায় ইমামতি করেন হাদির বড় ভাই ড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক। নামাজের আগে এক আবেগঘন বক্তৃতায় তিনি উপস্থিত সবার চোখে পানি এনে দেন। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন: “হাদির ছেলের বয়স মাত্র ৮ মাস। সন্তান হওয়ার পর সে আমাকে বলেছিল—’ভাই, আমার ছেলের এমন একটা নাম দিন যার মধ্যে বিপ্লবী চেতনা আর সাহসিকতা থাকবে।’ আমি ওর নাম রেখেছিলাম ‘ফিরনাস’, যার অর্থ বিপ্লবী। আজ সেই ছোট্ট ফিরনাসের দিকে তাকানো যায় না, আমার মা হাদির শোকে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন।”

জাতির কাছে বিচার চেয়ে প্রশ্ন

হাদির বড় ভাই আবেগ সামলে নিয়ে জাতির কাছে একটি কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। তিনি বলেন, “সাত-আট দিন হয়ে গেল, প্রকাশ্য দিবালোকে রাজধানীতে খুনিরা গুলি করে পার পেয়ে যায়, এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু নেই। ৫-৭ ঘণ্টা সময় পেয়ে তারা কীভাবে বর্ডার ক্রস করল? এই প্রশ্ন আমি জাতির কাছে রেখে গেলাম।”

শ্বেতশুভ্র কাফনে মোড়ানো এক অকুতোভয় যোদ্ধা

জানাজার দৃশ্যটি ছিল দেখার মতো। সাদা কাফনে মোড়ানো হাদির নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে কাঁদছিলেন হাজারো তরুণ। যারা জুলাইয়ের উত্তাল দিনগুলোতে তার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন, তারা আজ প্রিয় সহযোদ্ধাকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন।

রাষ্ট্রীয় শোক: হাদির সম্মানে আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক। জাতীয় পতাকা রাখা হয়েছে অর্ধনমিত।

পরবর্তী কর্মসূচি: জানাজা শেষ হতেই ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে একটি বিশাল শোক মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শাহবাগের অভিমুখে যাত্রা করে, যেখানে হাদির খুনিদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তারের দাবি তোলা হয়।

চিকিৎসার শেষ দিনগুলো

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বুকে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হয়েছিলেন হাদি। ঢাকা মেডিকেল ও এভারকেয়ার হাসপাতালের পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

শহীদ শরিফ ওসমান হাদির এই মহাপ্রস্থান কেবল একটি মৃত্যু নয়, বরং জুলাই বিপ্লবের আদর্শকে আরও একবার সুসংহত করার শপথ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর এই জনসমুদ্রে।

এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com