Home আন্তর্জাতিক মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ:বিশ্বজুড়ে হজযাত্রীদের অভূতপূর্ব স্বস্তি

মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ:বিশ্বজুড়ে হজযাত্রীদের অভূতপূর্ব স্বস্তি

সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রিয়াদ:  সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘মক্কা রুট উদ্যোগ’ (মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ) বিশ্বজুড়ে হজযাত্রীদের অভূতপূর্ব স্বস্তি এনে দিয়েছে। ‘ভিশন ২০৩০’-এর আওতায় ‘পিলগ্রিম এক্সপেরিয়েন্স প্রোগ্রাম’-এর অংশ হিসেবে পরিচালিত এই উদ্যোগের মাধ্যমে এ পর্যন্ত এক মিলিয়নেরও বেশি হজযাত্রী উপকৃত হয়েছেন।

২০১৮ সালে চালু হওয়া এবং ২০১৯ সালে সক্রিয়ভাবে কার্যকর হওয়া এই প্রকল্প হজযাত্রীদের নিজ নিজ দেশের বিমানবন্দরেই সৌদি আরবে প্রবেশের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার সুযোগ করে দেয়। এর ফলে সৌদি আরবে পৌঁছেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে হয় না, বরং বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মক্কা বা মদিনার নির্ধারিত আবাসস্থলে পৌঁছে যান যাত্রীরা।

হজযাত্রীদের স্বস্তির অভিজ্ঞতা:

এই উদ্যোগে অংশগ্রহণকারী ৮টি দেশের ১২টি বিমানবন্দরে বিশেষ লাউঞ্জের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পাসপোর্ট যাচাই এবং লাগেজ প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন করা হয়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, মরক্কো, মালদ্বীপ এবং কোট দিভোয়ার এই সুবিধাভোগী দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত।

৭৪ বছর বয়সী মালয়েশীয় হজযাত্রী হাসনা হামজা কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে নিজের সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মদিনায় পৌঁছে বলেন, “প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত মসৃণ, সম্মানজনক এবং গভীরভাবে আধ্যাত্মিক।”

পাকিস্তানি হজযাত্রী নাভেদ হাসান বলেন, “এই উদ্যোগের কারণে মানসিক প্রশান্তির সঙ্গে আমরা হজের অন্যতম পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে পারছি।” বাংলাদেশের মোহাম্মদ মুবারক যোগ করেন, “নিজ দেশে থেকেই সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে পারায় অনেক সময় ও মানসিক চাপ কমে গেছে।”

বাংলাদেশি হজযাত্রীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা:

গত ২৯ এপ্রিল প্রথম দফায় ৪১৪ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছান। জেদ্দার কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁদের স্বাগত জানান সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ দূতাবাস, কনস্যুলেট ও হজ মিশন হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সহায়তা দিচ্ছে।

প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা:

এই উদ্যোগে সৌদি সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সমন্বয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, হজ ও ওমরাহ, মিডিয়া, সাধারণ পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জাকাত ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ আরও সংস্থাগুলো যৌথভাবে এটি পরিচালনা করছে।

নিয়ম ভঙ্গের কঠোর সতর্কতা:

সৌদি হজ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “নুসুক” প্ল্যাটফর্ম ও “তাসরিহ” ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে যথাযথ হজ পারমিট না নিয়ে কেউ হজ পালনের চেষ্টা করলে তাকে ১ লাখ সৌদি রিয়াল পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। হজের নিরাপত্তা ও সার্বিক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ সংযোজন: মালদ্বীপ:

এই সপ্তাহে মালদ্বীপের ভেলানা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মক্কা রুট কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু উদ্বোধনী দিনে প্রথম যাত্রীর হাতে পাসপোর্ট তুলে দেন। এদিন ২৩৪ জন হজযাত্রী এই সুবিধা নিয়ে হজে রওনা হন।

সৌদি সরকারের ‘মক্কা রুট’ উদ্যোগ এখন বৈশ্বিকভাবে প্রশংসিত, কারণ এটি হজযাত্রাকে শুধুই একটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা নয়, বরং আধ্যাত্মিক প্রশান্তি ও নিরাপদ অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত করেছে।


📢 প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন: হজযাত্রা এখন আরও সহজ, সম্মানজনক ও প্রযুক্তিনির্ভর।