বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অন্যতম রত্ন ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে গত কয়েকদিন ধরে অবাধ ও ব্যাপক পাথর লুটপাটের ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা দাবি করছেন, প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার সাদা পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে, যা শুধু পরিবেশের জন্য নয়, এলাকার অর্থনৈতিক ও পর্যটন খাতের জন্যও মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তৎপরতা
অবশেষে জেলা প্রশাসন এই গুরুতর পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৎপর হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ সাংবাদিকদের জানান, এই ধরনের লুটপাটের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, “সাদা পাথরের অবস্থা যাচাই-বাছাই ও লুটপাটের পেছনের কারণ উদঘাটনের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক আরও জানান, আগামী ১৩ আগস্ট সাদা পাথর ও জাফলংসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলন নিয়ন্ত্রণে জরুরি সমন্বয় সভা আহ্বান করা হয়েছে। এই সভায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধের ব্যাপারে বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা হবে।
পরিবেশ ও পর্যটন সংকট
স্থানীয় পরিবেশবিদরা বলছেন, সাদা পাথরে অবাধ পাথর উত্তোলন ও লুটপাটের ফলে পাহাড় ও নদীর তীরভূমি ধ্বংসের শঙ্কা প্রবল। এতে মাটি ক্ষয় হচ্ছে, নদীর প্রবাহ পরিবর্তিত হচ্ছে এবং ফলশ্রুতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা বিপন্ন হচ্ছে। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এই এলাকা এখন মরুভূমির মতো শুষ্ক ও পাথুরে হয়ে পড়ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে পর্যটন শিল্পকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
স্থানীয় জনগণ জানাচ্ছেন, পাথর কেটে বিক্রির সঙ্গে জড়িত বড় বড় সিন্ডিকেটগুলো প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজ করছে, ফলে তৎপরতা জরুরি হয়ে উঠেছে।
রাজনৈতিক প্রভাব
অন্যদিকে, এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাবও পড়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনের নাম এই ঘটনায় উঠে আসায় তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় পদ স্থগিত করেছে বিএনপি। এটি প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক স্তরেও এই অবৈধ লুটপাটের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে জরুরি ভিত্তিতে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে অভিযান চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে অবৈধ উত্তোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেটবাসী আশা করছেন, প্রশাসনের এই পদক্ষেপ সাদা পাথরের লুটপাট বন্ধ করে প্রকৃত সৌন্দর্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে এবং পরিবেশ ও পর্যটন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে।










