Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য আজকের ইয়াঙ্গুন: সময়ের রূপান্তরে এক শহরের স্মৃতি ও পরিবর্তন

আজকের ইয়াঙ্গুন: সময়ের রূপান্তরে এক শহরের স্মৃতি ও পরিবর্তন

ইয়াঙ্গুন। সংগৃহীত ছবি

ইয়াঙ্গুন সফর: এক সাংবাদিকের চোখে (পর্ব–শেষ)

কামরুল ইসলাম: দুই দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে ২০০৩ সালের সেই সফরের পর। এখন ইয়াঙ্গুন (আগের নাম রেঙ্গুন) যেন এক ভিন্ন শহর। তখনকার মিয়ানমারের রাজধানী ছিল এই শহরই, রাজনৈতিক ক্ষমতা, কূটনৈতিক মিশন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু আজ ইয়াঙ্গুন শুধু এক প্রাক্তন রাজধানী নয়; এটি মিয়ানমারের বাণিজ্য ও সংস্কৃতির স্পন্দন বহন করে চলা এক স্মৃতি-নগরী।

তখন হোটেল ট্রেডার্স ছিল শহরের সবচেয়ে আধুনিক আতিথেয়তার প্রতীক। এখন তার জায়গা নিয়েছে নতুন প্রজন্মের বিলাসবহুল হোটেল, কফিশপ আর বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স। ইয়াঙ্গুন নদীর তীরে গড়ে উঠেছে নতুন আবাসন প্রকল্প, আর পুরোনো উপনিবেশিক ভবনগুলোয় কেউ করছে অফিস, কেউ বানিয়েছে জাদুঘর বা গ্যালারি।

একসময় শহরজুড়ে দেখা যেত পুরোনো ব্রিটিশ ধাঁচের ভবন, চওড়া রাস্তা আর হাতে গোনা কিছু বিদেশি গাড়ি। এখন রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম, আধুনিক ট্যাক্সি, আর দেশি–বিদেশি পণ্যবাহী ট্রাক। ইয়াঙ্গুনের বন্দর আজও মিয়ানমারের বাণিজ্যের প্রধান প্রবেশদ্বার, কিন্তু ব্যবস্থাপনায় এসেছে দৃশ্যমান পরিবর্তন। ডিজিটাল ট্র্যাকিং, কনটেইনার ম্যানেজমেন্ট, কাস্টমস অটোমেশন—সব মিলিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া স্পষ্ট।

তবে শহরের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন প্রযুক্তি ও যোগাযোগে। তখন হাতে গোনা কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সীমিত স্বাধীনতায় কাজ করত। এখন, সেনাশাসনের নানা উত্থান-পতনের মধ্যেও, ইয়াঙ্গুনের নাগরিকরা সামাজিক মাধ্যমের যুগে প্রবেশ করেছে। তরুণ প্রজন্ম এখনো নতুন স্বপ্নে উজ্জীবিত, যদিও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আজও মিয়ানমারের ভবিষ্যৎকে অচেনা পথে নিয়ে যাচ্ছে।

ইয়াঙ্গুনের সন্ধ্যা আজও মন ছুঁয়ে যায়—সোনালী শ্বেদাগন প্যাগোডার দীপ্তিতে, কিংবা নদীর তীরে সূর্যাস্তের কোমল আলোয়। তবু ভেতরে ভেতরে অনুভূত হয় সময়ের ফারাক। ২০০৩ সালের সেই সফরের দিনগুলোর ইয়াঙ্গুন ছিল স্বপ্নময়; আজকের ইয়াঙ্গুন বাস্তবতার মুখোমুখি এক শহর, যে নিজের পরিচয় ধরে রাখার লড়াই করছে।

স্মৃতির আয়নায় তাকালে দেখা যায়—সময় বদলেছে, মানুষ বদলেছে, শহরও বদলেছে। তবু সেই ইয়াঙ্গুনের রাস্তা, বন্দর, আর বন্ধুত্বের মুহূর্তগুলো আজও রয়ে গেছে মনের কোণে, ইতিহাসের এক নীরব অধ্যায় হয়ে।