আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গৃহযুদ্ধ ও চরম রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিপর্যস্ত মিয়ানমারে আফিম (পপি) চাষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত এক দশকের মধ্যে দেশটিতে আফিম চাষ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বুধবার জাতিসংঘ এক সতর্কবার্তায় এই তথ্য জানিয়েছে।
একই সঙ্গে সংস্থাটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, মিয়ানমারে উৎপাদিত হেরোইন এখন আর কেবল এশিয়ায় সীমাবদ্ধ নেই, তা পশ্চিমা বিশ্বের বাজারগুলোতেও প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন
জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তরের (UNODC) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারে আফিম চাষের জমি ও উৎপাদনের পরিমাণ গত ১০ বছরের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটির অর্থনীতিতে ধস নামে এবং সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে জীবিকার বিকল্প হারিয়ে হাজার হাজার কৃষক আফিম চাষে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে শান ও সাগাইং অঞ্চলের মতো সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোতে এর বিস্তার সবচেয়ে বেশি।
পশ্চিমা বাজারে পাচার ও নতুন রুট
এতদিন মিয়ানমারের ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল’ বা স্বর্ণালী ত্রিভুজ এলাকায় উৎপাদিত হেরোইন মূলত চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পাচার হতো। কিন্তু জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এক নতুন ও উদ্বেগজনক চিত্র। প্রাথমিক তথ্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, এই মাদক এখন এশিয়া ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো পশ্চিমা বাজারগুলোতেও পাচার হচ্ছে। মাদক পাচারকারীরা নতুন নতুন রুট ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের জাল বিস্তার করছে।
আফগানিস্তানের শূন্যস্থান পূরণ
২০২২ সালে আফগানিস্তানে তালেবান সরকার মাদক চাষের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর বিশ্ববাজারে আফিমের সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দেয়। সেই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে মিয়ানমারের মাদক উৎপাদনকারীরা। বর্তমানে মিয়ানমার বিশ্বের শীর্ষ আফিম উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে।
অর্থনৈতিক সংকট ও সংঘাতের প্রভাব
জাতিসংঘের মতে, মিয়ানমারের এই পরিস্থিতির মূল কারণ হলো চলমান গৃহযুদ্ধ এবং ভঙ্গুর অর্থনীতি। মুদ্রাস্ফীতি, সারের দাম বৃদ্ধি এবং প্রথাগত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা অধিক মুনাফার আশায় আফিম চাষকে বেছে নিচ্ছেন। অন্যদিকে, বিভিন্ন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং মিলিশিয়ারা অস্ত্র কেনা ও নিজেদের কার্যক্রম চালানোর রসদ হিসেবে মাদক ব্যবসাকে ব্যবহার করছে।
বৈশ্বিক উদ্বেগ
জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, মিয়ানমারের এই পরিস্থিতি কেবল আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যই হুমকি নয়, বরং এটি বৈশ্বিক মাদক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে মিয়ানমারের হেরোইনের অনুপ্রবেশ জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপের ওপর জোর দিয়েছে জাতিসংঘ, যদিও মিয়ানমারের বর্তমান জান্তা সরকারের অধীনে তা বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।










