Home আন্তর্জাতিক মায়ের সেবার অধিকার কার? আদালতে দুই ভাইয়ের ‘বিরল’ লড়াই

মায়ের সেবার অধিকার কার? আদালতে দুই ভাইয়ের ‘বিরল’ লড়াই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে সাধারণত জমিজমা বা পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে বিরোধ, এমনকি তা আদালত পর্যন্ত গড়ানোর ঘটনা অহরহ দেখা যায়। কিন্তু বয়োজ্যেষ্ঠ মায়ের সেবা করার অধিকার কার তা নিয়ে আদালতে দুই ভাইয়ের লড়াইয়ের ঘটনা ইতিহাসে বিরল। সৌদি আরবের দুই ভাইয়ের এমন একটি আবেঘন ঘটনা সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা নেটিজেনদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

ঘটনাটি সৌদি আরবের আল-আসিয়াহ এলাকার। সেখানে দুই ভাই তাঁদের বৃদ্ধা মায়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ও সেবা করার অধিকার দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হন।

বড় ভাইয়ের আত্মত্যাগ ও যুক্তি
মামলার শুনানিকালে বড় ভাই হিজাম আল-গামদি আদালতে জানান, তিনি দীর্ঘ বছর ধরে একনিষ্ঠভাবে মায়ের সেবা করে আসছেন। মায়ের সেবায় যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে, সেজন্য তিনি বিয়ে করেননি, এমনকি কোনো চাকরিও নেননি। তাঁর কাছে মায়ের সেবা করাই জীবনের পরম আনন্দ এবং বেঁচে থাকার সার্থকতা। তিনি কোনোভাবেই মায়ের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে রাজি নন।

ছোট ভাইয়ের যুক্তি
অন্যদিকে ছোট ভাই পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন। তিনি আদালতকে বলেন, বড় ভাইয়ের বয়স হয়েছে এবং তাঁর নিজেরই এখন বিশ্রাম ও অন্যের সহায়তার প্রয়োজন। ছোট ভাই হিসেবে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে বেশি শক্তিশালী। এছাড়া তাঁর স্ত্রী-সন্তান ও চাকরি থাকায় মায়ের সার্বিক যত্ন নিতে তিনি বেশি উপযুক্ত।

মায়ের সিদ্ধান্ত ও আদালতের রায়
উভয় পক্ষের আবেগঘন যুক্তি শোনার পর বিচারক বৃদ্ধা মায়ের কাছে জানতে চান, তিনি কোন ছেলের সঙ্গে থাকতে চান। উত্তরে মা জানান, ‘দুজনই আমার দুই চোখের মতো (ডান ও বাম চোখ)। এদের মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব।’

মায়ের অপারগতা প্রকাশ করায় বিচারককেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বিচারক ছোট ভাইয়ের বয়স, শারীরিক সক্ষমতা এবং পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁর পক্ষেই রায় দেন। তিনি রায়ে উল্লেখ করেন যে, ছোট ভাই যেহেতু বয়সে তরুণ এবং সামর্থ্যবান, তাই তিনিই মায়ের দায়িত্ব পালনে অধিক যোগ্য।

আবেগঘন পরিসমাপ্তি
আদালতের রায় শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন বড় ভাই হিজাম। মায়ের সেবা করার সুযোগ ‘হারানোর’ বেদনায় তিনি নিজেকে সামলাতে পারছিলেন না। যদিও ঘটনাটি বেশ আগের, তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি পুনরায় আলোচনায় এলে মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন এই দুই ভাই।

জানা গেছে, আদালতের রায় ছোট ভাইয়ের পক্ষে গেলেও, বড় ভাই হিজাম হাল ছাড়েননি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মায়ের ছায়াসঙ্গী হয়েই ছিলেন এবং তাঁর সেবা করে গেছেন।