Home সারাদেশ রগ কেটে চোখ উপড়ে বন্ধুকে হত্যা

রগ কেটে চোখ উপড়ে বন্ধুকে হত্যা

মায়ের অপেক্ষার প্রহর ফুরালো লাশে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, নাটোর: বন্ধু’ ডাকটি যে এমন মরণফাঁদ হতে পারে, তা হয়তো ঘুণাক্ষরেও টের পাননি ২৫ বছরের টগবগে যুবক সোহাগ হোসেন। বিশ্বাস করে মাঝরাতে বন্ধুর ডাকে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন, ভেবেছিলেন কাজের শেষে ফিরে আসবেন মায়ের কোলে। কিন্তু ফেরা হলো না। ফিরল কেবল তার ক্ষতবিক্ষত নিথর দেহ। যে চোখ দিয়ে পৃথিবীকে দেখতেন, সেই দুটি চোখ নৃশংসভাবে উপড়ে ফেলা হয়েছে; কেটে দেওয়া হয়েছে পায়ের রগ। বন্ধুত্বের এমন ভয়াবহ পরিণতির সাক্ষী হলো নাটোরের বড়াইগ্রাম।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার আগ্রাণ এলাকার একটি গাছের শিকড়ের ভেতর থেকে সোহাগের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে নিহতের মামা আবু হানিফ বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

বিশ্বাসের সুযোগে মরণফাঁদ
মামলার এজাহার ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১২টা। সবাই যখন গভীর ঘুমে, তখন সোহাগের মোবাইলে কল আসে তার বন্ধু ও প্রতিবেশী আকাশ হোসেনের। ট্রাক থেকে বালু নামাতে হবে—এমন কথা বলে সোহাগকে ডেকে নিয়ে যান আকাশ। সরল বিশ্বাসে বন্ধুর সঙ্গে অন্ধকারে পা বাড়ান সোহাগ। সেই যাওয়াই ছিল তার শেষ যাওয়া।

মায়ের আহাজারি ও আসামিদের নিষ্ঠুরতা
সোহাগ বাড়ি না ফেরায় তার মা পারভিন বেগমের বুক কাঁপতে শুরু করে। ছেলের সন্ধানে তিনি ছুটে যান বন্ধু আকাশের বাড়িতে। আশা ছিল, ছেলের খোঁজ মিলবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি কেবল নিরাশই হননি, উল্টো শিকার হয়েছেন দুর্ব্যবহারের। আসামিরা তাকে তাড়িয়ে দেন। কোনো উপায় না দেখে শুক্রবার থানায় জিডি করেন নিহতের মামা। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।

গাছের শিকড়ে মিলল বীভৎস লাশ
নিখোঁজের দুই দিন পর শনিবার সকালে আগ্রাণ এলাকায় একটি গাছের নিচে সোহাগের মরদেহ পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দৃশ্যটি ছিল সহ্য করার মতো নয়। খুনিরা কতটা পাষাণ হলে মানুষকে এভাবে মারতে পারে! সোহাগের পায়ের রগ কাটা ছিল, আর তার দুটি চোখ ছিল উপড়ানো। ধারণা করা হচ্ছে, প্রচণ্ড আক্রোশ থেকে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করতেই এমন পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।

বন্ধু আকাশ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সোহাগের সেই বন্ধু আকাশ হোসেন (২৭)। মামলায় আকাশ ছাড়াও তার মা কহিনুর বেগম (৬২), ভাই ডাবলু (৪৫), লাভলু (৩৮) এবং বোন নিপা খাতুন (৩৫)-কে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “এটি একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড। মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। মামলা হওয়ার আগেই আমরা সন্দেহভাজনদের ধরতে অভিযান শুরু করেছি। যদিও রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি, তবে অপরাধীরা বেশিদিন পালিয়ে থাকতে পারবে না। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে এই নৃশংসতার রহস্য উদঘাটন করা হবে।”

সোহাগের এমন মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকে পাথর হয়ে গেছে তার পরিবার। এলাকাবাসীর একটাই দাবি—যেই ‘বন্ধু’ বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে এমন জঘন্য কাজ করেছে, তার যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।