Home First Lead পতনের বাজারেও বিও খোলার ধুম: স্থানীয়দের ‘নির্বাচনী’ বাজি?

পতনের বাজারেও বিও খোলার ধুম: স্থানীয়দের ‘নির্বাচনী’ বাজি?

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: অর্থনীতির সাধারণ সূত্র বলে, কোনো বাজারে ধস নামলে বা আস্থার সংকট তৈরি হলে সেখান থেকে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নেন। অথচ বাংলাদেশের শেয়ার বাজারে এখন চলছে এক অদ্ভুত ও বিপরীতমুখী স্রোত। একদিকে যখন ‘স্মার্ট মানি’ বা বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা লাগাতার বাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই পতনের বাজারে নতুন করে হিসাব খুলছেন স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা। বিশ্লেষকরা একে দেখছেন আসন্ন ফেব্রুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের এক ঝুঁকিপূর্ণ ‘বাজি’ হিসেবে।

১৭ ডিসেম্বর ২০২৫-এর বাজার বিশ্লেষণ ও সিডিবিএলের পরিসংখ্যান এক গভীর কূটাভাসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। টানা দরপতন ও ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসা তলানির লেনদেন যখন বাজারের ভগ্নদশার জানান দিচ্ছে, তখন ডিসেম্বরের মাত্র ১১ কার্যদিবসে ১ হাজার ৭৫২টি নতুন বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খোলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৫৯ জন নতুন বিনিয়োগকারী এই ধসে পড়া বাজারে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আশা নাকি মরীচিকা?
বাজার-সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই নতুন বিও হিসাব খোলার পেছনে কাজ করছে ‘ফেব্রুয়ারি ফ্যাক্টর’। আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাজারে একটি কৃত্রিম উত্থান বা ইতিবাচক পরিবর্তনের আশা করছেন অনেকে। অতীতে নির্বাচনের আগে বা পরে শেয়ার বাজারে সাময়িক তেজিভাব দেখা যাওয়ার নজির থেকেই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, হয়তো সুদিন ফিরবে। এই আশাই তাদের পতনের বাজারে নতুন করে টেনে আনছে।

বিদেশিদের সতর্কবার্তা
তবে স্থানীয়দের এই আশাবাদের ঠিক বিপরীতে অবস্থান করছেন বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা। তারা আবেগের চেয়ে বাস্তবতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি ডিসেম্বরেও বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ১৪টি। আর ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার বিদেশি হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থাৎ, যারা বাজারের গভীরতা বোঝেন, তারা এখনই আস্থা পাচ্ছেন না।

বাস্তবতার জমিন ও সতর্কবার্তা
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলামের বক্তব্যেও উঠে এসেছে সতর্কবার্তা। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, শুধু বিও হিসাব বাড়লেই বাজারে টাকা আসে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বিএসইসির সংস্কার উদ্যোগগুলো এখনো বাজারে দৃশ্যমান কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। তারল্য সংকটে ভোগা এই বাজারে স্থানীয়দের নতুন একাউন্ট খোলা তাই বিনিয়োগের চেয়ে ‘স্পেকুলেশন’ বা ফাটকা ব্যবসার প্রস্তুতি বলেই মনে করছেন অনেকে।

পরিসংখ্যানের অন্ধকারের মধ্যে আলোর খোঁজে
২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে চলে গেছেন। ডিএসইএক্স সূচক ৪ হাজার ৮৫৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের হঠাত এই ‘বিও হিসাব খোলার ধুম’ কি তাদের ভাগ্য ফেরাবে, নাকি নির্বাচনের ডামাডোলে তারা ফের কোনো সিন্ডিকেটের ফাঁদে পা দিচ্ছেন—সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মৌলভিত্তি ও দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার ছাড়া কেবল নির্বাচনকেন্দ্রিক আবেগের ওপর ভর করে বিনিয়োগ করাটা হবে ‘বালির বাঁধের’ ওপর ঘর তোলার মতোই ঝুঁকিপূর্ণ।

এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com