Home আন্তর্জাতিক ভারতের পানি আগ্রাসনে বিপন্ন পাকিস্তান

ভারতের পানি আগ্রাসনে বিপন্ন পাকিস্তান

শিয়ালকোটের কাছে জিরো পয়েন্টে চেনাব। ছবি: সংগৃহীত

চেনাবের পর এবার ঝিলামেও ‘মরুকরণ’ ষড়যন্ত্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:পাকিস্তানের চেনাব নদীর পর এবার ঝিলাম নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহেও বিঘ্ন ঘটাচ্ছে ভারত। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আকস্মিক পানি আটকে রাখা এবং পরবর্তীতে তা ছেড়ে দেওয়ার ফলে পাকিস্তানে কৃষি ও সেচ ব্যবস্থা চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
ঝিলাম নদীতে পানি সংকট ও প্রভাব

পাকিস্তান সিন্ধু পানি কমিশনারের কার্যালয় জানিয়েছে, ঝিলাম নদীর উজানে ভারত অংশে পানি আটকে দেওয়ায় পাকিস্তানের মাংলা বাঁধে পানি আসা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। সেচ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, “পাকিস্তানের মোট ২ কোটি ৫০ লাখ একর কৃষি জমির মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ একর জমি বিভিন্ন খালের পানির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে এই বিশাল এলাকার একটি বড় অংশ পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছে না, যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।”

পরিসংখ্যান ও তথ্যপ্রমাণ

অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদন অনুযায়ী:

গত ১৪ ডিসেম্বর মাংলা বাঁধে পানির প্রবাহ ছিল ৫,০০০ কিউসেক।

১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই প্রবাহ কমে ৩,৩০০ কিউসেকে দাঁড়িয়েছে।

অথচ গত বছরের এই সময়ে প্রবাহ ছিল ৪,৪০০ কিউসেক।

পাকিস্তানের ‘কেরোট হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্ট’-এর তথ্যও একই সংকেত দিচ্ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ভারত তাদের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে পানি আটকে রেখে এবং হঠাৎ ছেড়ে দিয়ে এই কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, যা সরাসরি সিন্ধু পানি চুক্তির লঙ্ঘন।

চেনাব নদীর পরিস্থিতি ও বাগলিহার বিতর্ক

অন্যদিকে, পাকিস্তানের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, গত কয়েক দিনের অস্থিরতার পর চেনাব নদীর পানি প্রবাহ কিছুটা স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। গত ১০ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চেনাব নদীতে অস্বাভাবিক পানি স্বল্পতা দেখা দিয়েছিল।

স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারতের ‘বাগলিহার’ জলাধারের উপরিভাগ প্রথমে সংকুচিত হয় এবং পরে আবার বাড়তে থাকে। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ভারত নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাগলিহার জলাধারটি খালি করে পুনরায় ভর্তি করেছে। সিন্ধু পানি চুক্তি (IWT) অনুযায়ী, ভারত তাদের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জলাধার এভাবে খালি করতে পারে না। এ বিষয়ে পাকিস্তানের সিন্ধু পানি কমিশনার ভারতের কাছে বিস্তারিত তথ্য ও ব্যাখ্যা তলব করেছেন।

প্রেক্ষাপট ও কূটনৈতিক উত্তেজনা

চলতি বছরের এপ্রিলে অধিকৃত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার অজুহাতে ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিল। পাকিস্তান একে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে অভিহিত করে। পরবর্তীতে নেদারল্যান্ডের হেগ-ভিত্তিক ‘পার্মানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন’ (PCA) এক রায়ে জানায়, ভারত একতরফাভাবে এই চুক্তি স্থগিত করতে পারে না।

কৃষি খাতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

সেচ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাঞ্জাব প্রদেশের একটি বিশাল অংশ ঝিলাম ও চেনাব নদীর ওপর নির্ভরশীল। রবি শস্য, বিশেষ করে গম চাষের এই মৌসুমে পানির এই কৃত্রিম সংকট ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া বর্ষাকালে তথ্য না দিয়ে হঠাৎ পানি ছেড়ে দিয়ে ভারত পাকিস্তানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি করেছিল বলেও অভিযোগ করা হয়।

পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, তারা নদীর পানি প্রবাহ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে এবং যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি ব্যবস্থাপনা কৌশল পরিবর্তন করা হচ্ছে।

এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com