Home চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও নিরাপত্তায় রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নির্বাচনি অঙ্গীকার’ জরুরি

পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও নিরাপত্তায় রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নির্বাচনি অঙ্গীকার’ জরুরি

 সিসিআরএসবিডি’র আঞ্চলিক সংলাপ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কেবল একটি আঞ্চলিক অগ্রাধিকার নয়, বরং এটি একটি জাতীয় অপরিহার্যতা। ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি হলেও তা বর্তমানে কার্যত অচল। তাই এই অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সমাধান ও রক্তপাতহীন জনপদ গড়তে রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ অবস্থান তুলে ধরতে হবে।

আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রামের বায়েজিদ আরেফিন নগরে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক আঞ্চলিক সংলাপে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তা জোরদারে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি অঙ্গীকার’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম সেন্টার ফর রিজিওন্যাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

সিসিআরএসবিডি’র চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ও সিসিআরএসবিডি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহফুজ পারভেজ।

মূল প্রবন্ধে ড. মাহফুজ পারভেজ বলেন, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসার এই সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং জাতিগত বৈচিত্র্যের কথা মাথায় রেখে দলগুলোর নীতি-নির্দেশনা প্রকাশ করা অত্যন্ত জরুরি। ভূমি বিরোধ, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এবং আন্তঃ-সম্প্রদায়গত আস্থার সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বচ্ছতা ও কৌশলগত দূরদৃষ্টির পরিচয় দিতে হবে।

সংলাপে পার্বত্য অঞ্চলের সংকট নিরসনে ১৫-দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • শান্তি চুক্তির বিতর্কিত ধারা পুনর্মূল্যায়ন করে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সেনাক্যাম্প বহাল রাখা।
  • ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করে একক ক্ষমতার বদলে সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক করা।
  • আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদগুলোতে প্রতি ৫ বছর অন্তর নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা।
  • চাকরি, উচ্চশিক্ষা ও ব্যবসার ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা ও ট্যাক্স বৈষম্য দূর করা।
  • সন্ত্রাস, অস্ত্র ও মাদক পাচারে লিপ্ত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

প্যানেল আলোচক হিসেবে চবি সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, পার্বত্য সমস্যার সমাধানে পাহাড় ও সমতলের মানুষের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ কাজের কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক দলগুলোকে কেবল ভোটের বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নীতিনির্ভর চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কুমার সুই চিং প্রম্ন সাইন বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ও উন্নয়নের প্রতি বৈরী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হতে হবে।

সংলাপে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. শরীফ আশরাফুজ্জামান, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহ মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন ইকবাল বীর প্রতীক, সিনিয়র সাংবাদিক ওমর কায়সার এবং চবি চাকসু কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিসিআরএসবিডি’র পরিচালক অধ্যাপক সরওয়ার জাহান।

বক্তারা উপসংহারে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নানামুখী সমস্যাকে কেবল সামরিক দৃষ্টিভঙ্গিতে না দেখে রাজনৈতিক ও সামাজিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। দলগুলোর নির্বাচনি অঙ্গীকার কেবল কাগজে-কলমে নয়, বরং বাস্তবমুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে দৃশ্যমান করার আহ্বান জানানো হয়।