বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বৃহত্তর সিলেটের চারটি জেলা—সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বেড়ে গেছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—সবখানেই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ‘ভোট’।
সিলেটের ১৯টি আসনেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের তোড়জোড় চোখে পড়ার মতো। গত ১১ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস এবং নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (NCP)-এর প্রার্থীরা এখন দিনরাত এক করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বিগত চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগকে এই নির্বাচনে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
সিলেটের রাজনীতিতে প্রবাসীদের প্রভাব বরাবরের মতোই বেশি। এবারের নির্বাচনেও বিভাগের চারটি জেলায় অর্ধশতাধিক প্রবাসী প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন।
বিএনপি ও জোট: সিলেট-২ আসনে তারেক রহমানের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হুমায়ুন কবির এবং মৌলভীবাজার-২ আসনে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সওকত হোসেনের মতো প্রার্থীরা আলোচনায় আছেন।
ইসলামী দলসমূহ: খেলাফত মজলিস সিলেটের ১৯টি আসনের জন্য যে তালিকা দিয়েছে, তার মধ্যে ৫ জনই যুক্তরাজ্য ও কাতার প্রবাসী। তবে স্থানীয় অনেক ভোটার ও রাজনৈতিক নেতাদের মতে, এসব প্রবাসী প্রার্থীরা ‘জনবিচ্ছিন্ন’ এবং কেবল টাকার জোরে মনোনয়ন পেতে চান।
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনের মতো বেশ কিছু জায়গায় বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এবার জোটসঙ্গীর বদলে নিজস্ব দলীয় প্রার্থী চান। তাদের দাবি, দীর্ঘ সময় জোটের কারণে তারা নিজেদের মার্কা ‘ধানের শীষ’ নিয়ে ভোট দিতে পারেননি। এবার তারা কোনো ছাড় দিতে রাজি নন। এদিকে জামায়াতে ইসলামী এবং অন্যান্য শরিক দলগুলোও তাদের শক্তিশালী অবস্থানের জানান দিচ্ছে, যা জোটের ভেতরে এক ধরণের অদৃশ্য প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেছে।
সিলেট-১: এই হেভিওয়েট আসনে বিএনপির খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সাথে এনসিপি বা অন্যান্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লড়াইয়ের সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে।
সিলেট-৬: বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ আসনে জামায়াতের অবস্থান ও বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভোটের ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
হবিগঞ্জ-৩: এখানে বিএনপির জি কে গউছ বেশ সরব এবং জ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
২০২৪-এর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (NCP) সিলেটে একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তরুণ ভোটারদের একটি বড় অংশ এই নতুন শক্তির দিকে ঝুঁকে আছে, যা ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ভোটের তারিখ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৬
প্রতীক বরাদ্দ: ২১ জানুয়ারি ২০২৬
প্রচারণা শেষ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৬
সিলেটের মানুষ এখন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অপেক্ষায়। গত দেড় দশকের রাজনৈতিক খরা কাটিয়ে ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন—এমনটাই সবার প্রত্যাশা। তবে শেষ পর্যন্ত জোটের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয় এবং নতুন শক্তিগুলো কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।










