কৃষ্ণা বসু, কলকাতা:পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এখন উত্তপ্ত। একদিকে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের হাতছানি, অন্যদিকে আরজি কর পরবর্তী সামাজিক আন্দোলন এবং সিভিক ভলান্টিয়ার (এসআইআর বা বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী সংশ্লিষ্ট) ইস্যু রাজ্য সরকারকে কঠিন পরীক্ষার মুখে দাঁড় করিয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৫ সালেও বাংলার রাজনীতির অবিসংবাদিত মুখ হিসেবে নিজের আধিপত্য বজায় রেখেছেন। তবে এ বছর তাকে বেশ কিছু অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে নারীশক্তির ওপর গুরুত্ব: আরজি কর কাণ্ডের পর নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মমতা সরকার ‘অপরাজিতা বিল’ পাসসহ একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ রদবদল: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলে তরুণ প্রজন্মের আধিপত্য বাড়ছে যা নিয়ে প্রবীণ ও নবীনের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছেন মমতা।
পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা এখন রাজনৈতিক বিতর্কের তুঙ্গে। সুপ্রিম কোর্টের কড়া পর্যবেক্ষণের পর রাজ্য সরকার সিভিক ভলান্টিয়ারদের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি নিয়ে নতুন গাইডলাইন তৈরি করতে বাধ্য হয়েছে। নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ: বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ এই বিশাল বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সরকার দাবি করছে যে এটি কর্মসংস্থানের একটি বড় মাধ্যম। সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রশিক্ষণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এখন রাজ্য সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ২০২৫ সালে এসে ‘এক পা এগিয়ে দুই পা পিছিয়ে’ যাওয়ার মতো পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে। বকেয়া পাওনা ও কেন্দ্রীয় বরাদ্দ: ১০০ দিনের কাজ (MGNREGA) এবং আবাস যোজনার বকেয়া টাকা নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চরম সীমায় পৌঁছেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে ‘আর্থিক অবরোধ’ করছে। মুখোমুখি সাক্ষাৎ বনাম রাজনৈতিক লড়াই: একদিকে প্রশাসনিক বৈঠকে মোদি ও মমতার সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ দেখা গেলেও রাজনৈতিক ময়দানে তারা একে অপরের কঠোর সমালোচক। বিশেষ করে অনুপ্রবেশ ইস্যু এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে দুই সরকারের মতবিরোধ স্পষ্ট। সিবিআই-ইডি তৎপরতা: রাজ্যের একাধিক প্রভাবশালী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলোর সক্রিয়তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছেন যা দিল্লির সাথে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটিছে।
২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে মমতা সরকারের সামনে বড় সংকট হলো মধ্যবিত্ত ও তরুণ ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। আরজি কর পরবর্তী নাগরিক আন্দোলন প্রমাণ করেছে যে কেবল সামাজিক ভাতা (লক্ষ্মীর ভাণ্ডার) দিয়ে ক্ষোভ প্রশমন করা কঠিন হতে পারে। এর পাশাপাশি বিজেপির মেরুকরণ এবং বাম-কংগ্রেসের ছাত্র-যুব আন্দোলনের তীব্রতা মমতার সরকারকে বহুমুখী চাপের মুখে রেখেছে।
২০২৫ সাল শেষে দেখা যাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে শক্ত হাতে হাল ধরে আছেন। তবে কেন্দ্রের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং রাজ্যের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার দাবি তাকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ২০২৬ সালের যুদ্ধের আগে ২০২৫-এর এই শেষ কয়েক দিন যেন মমতার সরকারের জন্য এক গভীর আত্মদর্শনের সময়।
এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com










