Home আন্তর্জাতিক ৫ মার্চের অপেক্ষায় হিমালয়কন্যা নেপাল

৫ মার্চের অপেক্ষায় হিমালয়কন্যা নেপাল

রামেশ ভট্ট,কাঠমান্ডু: ২০২৫ সালে নেপাল এক নাটকীয় গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছে। দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে নেপালি তরুণরা। এই আন্দোলনের মুখে গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

ওলি সরকারের পতনের পর নেপালে প্রশাসনিক শূন্যতা কাটাতে এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের লক্ষ্যে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নেপালের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সুশীলা কারকির নেতৃত্ব: ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নেপালে কোনো নারী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার মন্ত্রিসভায় ১৫ জনের বেশি সদস্য নেই এবং তাদের মূল লক্ষ্য হলো একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা। সংসদ ভেঙে দেওয়া: ১২ সেপ্টেম্বরই নেপালের ফেডারেল পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয় এবং নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

নেপালের নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে আগামী সাধারণ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচনের তারিখ: ৫ মার্চ ২০২৬ তারিখে নেপালের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন দাখিল: ২০ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন জমা দেবেন। নির্বাচনী কাঠামো: মোট ২৭৫টি আসনের মধ্যে ১৬৫ জন সরাসরি ভোটে (FPTP) এবং ১১০ জন সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (Proportional Representation) ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন।

২০২৫ সালের এই গণঅভ্যুত্থান নেপালের পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর (নেপালি কংগ্রেস, ইউএমএল) আধিপত্যে বড় ধাক্কা দিয়েছে। নতুন দলের জোয়ার: নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে ১২০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে যার এক-তৃতীয়াংশই এই তরুণদের আন্দোলনের পর গঠিত হয়েছে। প্রজন্মের লড়াই: ২০২৬ সালের নির্বাচনে পুরনো আমলের অভিজ্ঞ রাজনীতিকদের সাথে সরাসরি লড়াই হবে জেন জি বা তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের যারা স্বচ্ছতা ও সুশাসনের দাবি নিয়ে রাজনীতিতে আসছে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি চললেও অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে রয়েছে কিছু বড় চ্যালেঞ্জ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা: ওলি সমর্থকদের সাথে জেন জি আন্দোলনকারীদের সাম্প্রতিক সংঘর্ষ রাজনৈতিক পরিবেশকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার: অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়া এবং নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সরকারের জন্য বড় পরীক্ষা। ভারতের সাথে সম্পর্ক: নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সাথে ট্রানজিট ও জ্বালানি খাতে নতুন চুক্তি সই হয়েছে যা নেপালের অর্থনীতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে।

২০২৫ সালটি নেপালের জন্য ছিল ‘অধিকার আদায়ের বছর’। ৫ মার্চের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ। এই নির্বাচনই নির্ধারণ করবে নেপাল কি পুরনো রাজনৈতিক চক্রেই আটকে থাকবে না কি তরুণদের নেতৃত্বে এক নতুন ও স্বচ্ছ নেপাল বিশ্বমঞ্চে আত্মপ্রকাশ করবে।

এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com