সুবিধাজনক অবস্থানে জামায়াত?
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, নোয়াখালী: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর ছয়টি আসনের নির্বাচনী সমীকরণ প্রতিদিন বদলাচ্ছে। তবে এবারের নির্বাচনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং এই সুযোগে জামায়াতে ইসলামীর পরিকল্পিত প্রচার-তৎপরতা। জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে অন্তত তিনটিতে বিএনপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে খোদ দলীয় নেতা-কর্মীরাই রাজপথে নেমেছেন।
গৃহদাহে পুড়ছে বিএনপি
তৃণমূলের তথ্য বলছে, নোয়াখালী-২, ৫ ও ৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে অন্যকে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকরা।
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী): পাঁচবারের সাবেক এমপি জয়নুল আবদিন ফারুককে মনোনয়ন দিলেও সেটি মেনে নিতে পারছেন না কাজী মফিজুর রহমানের অনুসারীরা।
নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-সদরের একাংশ): প্রয়াত নেতা মওদুদ আহমদের এই আসনে মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের সমর্থকরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করছেন।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া): এখানে তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমকে মনোনয়ন না দেওয়ায় সাধারণ কর্মীদের মধ্যে ‘ভরাডুবির’ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফজলুল আজিম স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ার ঘোষণা দেওয়ায় হাতিয়ায় বিএনপি এখন দুই ভাগে বিভক্ত।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ আজাদ অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, “বড় দলে যোগ্য প্রার্থী অনেক থাকে, তাই কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। তবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সবাই ধানের শীষের পক্ষেই কাজ করবে।”
ভোটের মাঠে ‘নীরব’ কিন্তু সক্রিয় জামায়াত
বিএনপির যখন কোন্দল মেটাতে ব্যস্ত, জামায়াতে ইসলামী তখন প্রতিটি আসনে অনেক আগে থেকেই গুছিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। ছয়টি আসনেই তারা হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়েছে। বিশেষ করে নোয়াখালী-৩ আসনে বেগমগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন এবং নোয়াখালী-১ আসনে সাইফুল্লাহর শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তারা নিয়মিত গণসংযোগ করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি যদি এই কোন্দল নিরসন করতে না পারে, তবে বিরোধী জোটের ভোট জামায়াতের বাক্সে চলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোটারদের কণ্ঠস্বর: কী বলছেন সাধারণ মানুষ?
নির্বাচনী মাঠ ঘুরে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। সেনবাগ বাজারের একজন ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, “আমরা শান্তিতে ভোট দিতে চাই। কিন্তু বিএনপির ভেতরে যে মারামারি দেখছি, তাতে সাধারণ ভোটাররা দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছে। নিজেরা এক না হলে মানুষ কেন তাদের ভোট দেবে?”
হাতিয়ার একজন মৎস্যজীবী নুরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ফজলুল আজিম এই এলাকার মানুষের সাথে সবসময় ছিলেন। তাকে বাদ দিলে ধানের শীষের জন্য জেতা কঠিন হবে। আমরা ব্যক্তির চেয়ে উন্নয়ন আর নিরাপত্তা বেশি দেখি।”
অন্যদিকে, তরুণ ভোটার রাফসান আহমেদ বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের বাইরেও এনসিপি বা ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা নতুন বিকল্প হতে পারে। শেষ পর্যন্ত কে মাঠ ধরে রাখতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।”
সমীকরণে অন্য দলগুলো
শুধু বিএনপি-জামায়াত নয়, ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলতে চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তারা ছয়টি আসনেই হাতপাখা প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে। এ ছাড়া এনসিপি তিনটি আসনে এবং গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি সীমিত পরিসরে লড়াইয়ে আছে। তবে মূল লড়াই যে বিএনপি বনাম জামায়াতের ‘মানসতাত্ত্বিক’ যুদ্ধে রূপ নিচ্ছে, তা জেলার রাজনৈতিক চিত্র থেকেই স্পষ্ট।
এক নজরে নোয়াখালীর ভোটার সংখ্যা:
- মোট ভোটার: ২৮,৫৪,১৯৯ জন
- পুরুষ: ১৪,৮৩,৪৮৫ জন
- নারী: ১৩,৭০,৬৯৮ জন
- তৃতীয় লিঙ্গ: ১৬ জন
নোয়াখালীর রাজনীতিতে এখন ‘ঘর সামলানো’ই বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ। বিদ্রোহীরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকলে এর সরাসরি সুফল পাবে জামায়াত কিংবা অন্য দলগুলো। ধানের শীষের দুর্গ বলে পরিচিত এই জনপদে শেষ হাসি কে হাসবে, তা নির্ভর করছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে প্রার্থীরা কতটা সাধারণ ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে পারেন তার ওপর।
এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com










