হেলথ ডেস্ক: বর্তমানে নারীরা পুরুষের তুলনায় গড়ে ৪ থেকে ৬ বছর বেশি বাঁচলেও, এই বাড়তি সময়টা তারা সুস্থভাবে কাটাতে পারছেন না। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক নারী জীবনের শেষ ২০ থেকে ৩০ বছর অতিবাহিত করেন চরম শারীরিক দুর্বলতা, ভঙ্গুর হাড় এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার মধ্য দিয়ে। কিন্তু প্রখ্যাত মার্কিন অর্থোপেডিক সার্জন ডা. ভোন্ডা রাইট বলছেন, “বার্ধক্যের এই শারীরিক পতন অনিবার্য নয়; সঠিক পরিকল্পনায় শেষ বয়স পর্যন্ত শক্তিশালী থাকা সম্ভব।”
১. হরমোন ও হাড়ের স্বাস্থ্য
নারীদের মেনোপজের পর শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় হাড়ের ক্ষয় তিনগুণ বেড়ে যায়। প্রথম ৭-১০ বছরেই অনেক নারী তাদের হাড়ের ঘনত্বের (Bone Density) প্রায় ১৫-২০ শতাংশ হারিয়ে ফেলেন। ডা. রাইটের মতে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) হাড়ের এই ক্ষয় রোধে এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
২. পেশি গঠন ও ‘ফেস’ (FACE) ফর্মুলা
পেশি কেবল চলাচলের জন্য নয়, এটি শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা হাড়কে শক্ত রাখে এবং বিপাক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ডা. রাইট সুস্থ বার্ধক্যের জন্য ‘FACE’ নামে একটি ব্যায়ামের রুটিন অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন:
F (Flex & Stretch): প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট ইয়োগা বা পাইলেটস করা, যা শরীরের টেন্ডন ও লিগামেন্টকে নমনীয় রাখে।
A (Aerobic): সপ্তাহে অন্তত ৩ ঘণ্টা অ্যারোবিক ব্যায়াম (হাঁটা, সাঁতার বা সাইক্লিং)। এর মধ্যে সপ্তাহে দুই দিন ৩০ সেকেন্ডের জন্য উচ্চ-তীব্রতার (High-Intensity) ব্যায়াম করা উচিত।
C (Carry a Load): বয়স বাড়লে ওজন তোলা বা স্ট্রেংথ ট্রেনিং বাদ দেওয়া যাবে না। স্কোয়াট বা ডেডলিফটের মতো ভারী ওজন তোলার ব্যায়াম পেশির ক্ষয় (Sarcopenia) রোধ করে।
E (Equilibrium & Foot Speed): ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এক পায়ে দাঁড়ানো বা দ্রুত পা চালানোর ড্রিল করা, যাতে পড়ে গিয়ে হাড় ভাঙার ঝুঁকি কমে।
৩. হাড়ের শক্তির জন্য ‘জাম্পিং’
হাঁটা বা দৌড়ানোর চেয়ে ‘জাম্পিং’ বা লাফানো হাড়ের জন্য বেশি কার্যকর। হাড়কে শক্তিশালী করার জন্য শরীরের ওজনের ৩ থেকে ৪ গুণ মেকানিক্যাল ইমপ্যাক্ট প্রয়োজন। ডা. রাইট প্রতিদিন অন্তত ২০ বার একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে লাফ দেওয়ার পরামর্শ দেন, যা হাড়ের কোষগুলোকে পুনর্গঠিত হতে সংকেত দেয়।
৪. পুষ্টি ও প্রোটিন
বার্ধক্যে ডায়েটের নামে কম খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। ডা. রাইট আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড (চিনিযুক্ত খাবার, সাদা পাউরুটি) এড়িয়ে ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস (সবজি, ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ, বাদাম ও ডাল) অনুসরণের পরামর্শ দেন। বিশেষ করে পেশি ধরে রাখতে প্রতিদিন শরীরের প্রতি কেজি ওজনের বিপরীতে ১.৪ থেকে ২.২ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা জরুরি।
৫. ডেক্সা (Dexa) স্ক্যান
আপনার হাড়ের আসল অবস্থা জানতে নিয়মিত ডেক্সা স্ক্যান করা উচিত। এটি হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করে এবং অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ভঙ্গুরতার ঝুঁকি সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দেয়।
বিশেষজ্ঞের মত: “আমি ৫৯ বছর বয়সে এসে এখন আমার জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী সময় পার করছি। বার্ধক্যের শারীরিক অবক্ষয়কে ‘স্বাভাবিক’ ধরে না নিয়ে সঠিক ব্যায়াম এবং হরমোন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একে জয় করা সম্ভব।” — ডা. ভোন্ডা রাইট।










