আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আল-জৌফ (Al-Jawf) প্রদেশে প্রকৃতির এক বিস্ময়কর রূপান্তর ঘটেছে। গত কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো দিগন্তজোড়া সোনালি বালুরাশি ঢাকা পড়েছে ধবধবে সাদা বরফের চাদরে। বুধবার ও বৃহস্পতিবারের এই ভারী তুষারপাত ও শিলাবৃষ্টির ফলে উত্তপ্ত মরুভূমি এখন যেন এক শীতল রূপকথার রাজ্যে পরিণত হয়েছে।
বিরল তুষারপাতের কারণ ও আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি
সৌদি আরবের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের (NCM) তথ্যমতে, আরব সাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপের প্রভাবে এই অস্বাভাবিক আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। এই নিম্নচাপটি জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসকে মরুভূমির দিকে ঠেলে দিয়েছে, যা শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ভারী তুষারপাত ও শিলাবৃষ্টির সৃষ্টি করেছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা একে “ঐতিহাসিক আবহাওয়া বিপর্যয়” বা পরিবর্তনের সংকেত হিসেবে দেখছেন।
জনজীবনে প্রভাব ও পর্যটন
রাস্তাঘাট বন্ধ: আকস্মিক তুষার ও ভারী বৃষ্টির কারণে মদিনা ও আল-জৌফ অঞ্চলের বেশ কিছু প্রধান সড়কে যান চলাচল সাময়িকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কায় বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে কর্তৃপক্ষ।
পর্যটকদের ভিড়: মরুভূমিতে বরফ দেখার এই বিরল সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না স্থানীয় নাগরিক ও পর্যটকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (X) ও ইনস্টাগ্রামে বরফে ঢাকা উটের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। পর্যটন মন্ত্রণালয় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এই সৌন্দর্য উপভোগ করার পরামর্শ দিয়েছে।
প্রধান উপাত্ত ও পরিসংখ্যান:
| বিষয় | বিস্তারিত তথ্য |
| সর্বাধিক আক্রান্ত অঞ্চল | আল-জৌফ, মদিনা, তাবুক ও আবহা |
| বৃষ্টিপাতের রেকর্ড | গত ৪৮ ঘণ্টায় রেকর্ড ৫০ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে কিছু স্থানে |
| তাপমাত্রা | রাতের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের কাছাকাছি (০° থেকে ৩° সেলসিয়াস) নেমে গেছে |
| সতর্কতা | বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে লাল সতর্কতা (Red Alert) জারি করা হয়েছে |
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব?
পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন যে, সাধারণত ৫-১০ বছরে একবার হওয়া এই তুষারপাত এখন প্রায় প্রতি বছর বা দু’বছর পরপর দেখা যাচ্ছে। তারা মনে করছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মরুভূমির ইকোসিস্টেম বদলে যাচ্ছে। এটি একদিকে যেমন প্রাকৃতিক বিস্ময়, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে কৃষি ও মরু অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। “আমরা সাধারণত মদিনা বা আল-জৌফকে প্রচণ্ড গরমের জন্যই চিনি। কিন্তু বালুর ওপর বরফের স্তূপ দেখে মনে হচ্ছে আমরা আরবে নয়, ইউরোপের কোনো দেশে আছি।” — স্থানীয় এক পর্যটকের মন্তব্য।










