Home অন্যান্য উৎসবের আলোয় মানবিক বার্লিন

উৎসবের আলোয় মানবিক বার্লিন

 আভিজাত্য ছাপিয়ে বড় দিন এখন সহমর্মিতার উৎসব

 অরিন্দম বণিক, বার্লিন: বার্লিনের আকাশে এখন মেঘের ঘনঘটা, তাপমাত্রার পারদ নেমেছে হিমাঙ্কের নিচে। কিন্তু এই কনকনে ঠাণ্ডার মাঝেও এক অদ্ভুত উষ্ণতা ছড়িয়ে আছে শহরের প্রতিটি কোণায়। সেই উষ্ণতা কেবল ক্রিসমাস ট্রির রঙিন আলোর নয়, বরং মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার। রাজধানী বার্লিন এখন সেজেছে বড় দিনের সাজে, যেখানে উৎসবের আভিজাত্যের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে মানবিকতার গল্পগুলো।

বার্লিনের ঐতিহ্যবাহী ক্রিসমাস মার্কেটগুলোতে যখন সুগন্ধি ‘গ্লু-ভাইন’-এর ধোঁয়া উড়ছে, ঠিক তখনই একদল স্বেচ্ছাসেবীকে দেখা গেল আলেকজান্ডার প্লাজের এক কোণায়। তারা শহরের গৃহহীন মানুষদের জন্য গরম কাপড় এবং খাবার সংগ্রহ করছেন। ‘উষ্ণতার ঝুড়ি’ নামের এই উদ্যোগে শামিল হয়েছেন স্থানীয় শিক্ষার্থীরাও। তাদের মতে, নিজের জন্য কেনাকাটা করার চেয়ে একজন ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই বড় দিনের আসল সার্থকতা।

জার্মানিতে বড় দিন মানেই পারিবারিক পুনর্মিলন। কিন্তু যারা নিঃসঙ্গ বা বৃদ্ধ, যাদের দেখার কেউ নেই, তাদের জন্য বার্লিনের অনেক চার্চ ও সামাজিক সংগঠন আয়োজন করেছে ‘কমিউনিটি ডিনার’। বার্লিনের এক চার্চের স্বেচ্ছাসেবক লিন্ডা বললেন, “আমরা চাই না কেউ এই উৎসবের রাতে একাকী বোধ করুক। আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা, কারণ বড় দিন মানেই তো সবাইকে সাথে নিয়ে পথ চলা।”

গত কয়েক বছরে যুদ্ধবিগ্রহের কারণে অনেক শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন এই শহরে। এবারের বড় দিনের প্রস্তুতিতে তাদের প্রতি সহমর্মিতার এক অনন্য নজির দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় স্কুলগুলোতে জার্মান শিশুরা নিজেদের খেলনা ও চকলেট উপহার হিসেবে প্যাক করছে সেইসব শিশুদের জন্য, যারা নিজের দেশ ছেড়ে এখানে এসেছে। উপহারের প্যাকেটের ওপর ছোট ছোট হাতে লেখা— “তুমি একা নও, আমরা তোমার বন্ধু।”

বার্লিনের কু’ডাম (Ku’damm) এলাকার আলোকসজ্জা দেখতে আসা পর্যটক আর স্থানীয়দের ভিড়েও এই মানবিক ছোঁয়া স্পষ্ট। অনেকেই নিজের বাজেটের একটি অংশ দান করছেন ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের তহবিলে। দোকানের ঝকঝকে কাঁচের দেয়াল ছাপিয়ে বড় দিন এখানে হয়ে উঠেছে ত্যাগের এবং ক্ষমার এক মহোৎসব।

কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস আর তুষারপাতের মাঝেও বার্লিনের রাজপথ এখন এক মানবিক মহামিলনের সাক্ষী। চার্চের ঘণ্টাধ্বনি যখন বেজে উঠবে, তখন তা কেবল যিশুর জন্মক্ষণকেই ঘোষণা করবে না, বরং ঘোষণা করবে মানুষের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার জয়গান।