Home Second Lead জামায়াতের সঙ্গে জোট: এনসিপিতে গণপদত্যাগ ও বিদ্রোহ

জামায়াতের সঙ্গে জোট: এনসিপিতে গণপদত্যাগ ও বিদ্রোহ

আদর্শচ্যুতির অভিযোগে ক্ষুব্ধ তৃণমূল

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমঝোতার তোড়জোড় শুরু করতেই চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের আলটিমেটাম ও সাধারণ কর্মীদের চরম অসন্তোষে দলটি এখন খণ্ডবিখণ্ড হওয়ার উপক্রম।

আজ রোববার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক দীর্ঘ পোস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তাজনূভা জাবীন। ঢাকা-১৭ আসন থেকে তার নির্বাচন করার কথা থাকলেও তিনি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, জামায়াতের সঙ্গে এই জোট কোনো রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।

তিনি লিখেছেন, “১২৫ জনকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ডাক দিয়ে মাত্র ৩০ জনের জন্য আসন সমঝোতা করে বাকিদের নির্বাচন করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসানো হয়েছে। বিষয়টি ঠেলতে ঠেলতে একদম শেষ অবধি আনা হয়েছে যাতে কেউ স্বতন্ত্র নির্বাচনও করতে না পারে।” তিনি দলের ভেতরে ‘মাইনাস পলিটিক্স’ ও আদর্শচ্যুতির তীব্র নিন্দা জানান।

গতকাল সন্ধ্যায় দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন ৩০ জন কেন্দ্রীয় নেতা। এতে তারা জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানান। চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, নুসরাত তাবাসসুম ও মুশফিক উস সালেহীন। তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, জোটের কারণে দলের মূলনীতি বিসর্জন দেওয়া হলে তরুণ প্রজন্মের কাছে এনসিপি তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।

এরই মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় দল থেকে পদত্যাগ করেছেন ডা. তাসনিম জারা। তিনি ঢাকা-৯ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

নেতৃত্বের এমন সিদ্ধান্তে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূলের কয়েকজন কর্মীর বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলো:

রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার কর্মী শরিফুল ইসলাম বলেন: “আমরা রাজপথে লড়াই করেছি একটা নতুন রাজনীতির আশায়, যেখানে কোনো পুরনো আধিপত্যবাদী শক্তির লেজুড়বৃত্তি থাকবে না। কিন্তু এখন দেখছি গুটিকয়েক নেতার স্বার্থে পুরো দলকে জামায়াতের কাছে ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য চরম লজ্জার।” চট্টগ্রাম থেকে আসা কর্মী নুসরাত জাহান বলেন: “তাজনূভা আপার মতো প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যখন প্রতারণার শিকার হন, তখন আমাদের মতো সাধারণ কর্মীদের নিরাপত্তা কোথায়? আমাদের আবেগ নিয়ে খেলা করা হয়েছে। যে আদর্শ নিয়ে এনসিপিতে এসেছিলাম, তার কোনো চিহ্ন এখন আর অবশিষ্ট নেই।” রংপুরের একজন মাঠ পর্যায়ের সংগঠক আরমান হোসেন বলেন: “১২৫ জনকে আশা দিয়ে এখন মাত্র ৩০ জনকে গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাকি ৯৫ জন প্রার্থীর কী হবে? তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এনসিপি প্রথমে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর জামায়াতের দিকে ঝোঁকে। এনসিপি ৫০টি আসন দাবি করলেও জামায়াত ৩০টি আসনে ছাড় দিতে রাজি হয়েছে। আলোচনার খসড়া অনুযায়ী নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), আখতার হোসেন (রংপুর-৪), হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪) ও সারজিস আলমের (পঞ্চগড়-১) আসনগুলো প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে।

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মিলে গত ৭ ডিসেম্বর ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ গঠন করলেও মাস না পেরোতেই তা ভাঙনের মুখে পড়েছে। এনসিপি ও এবি পার্টি জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় আগ্রহী হলেও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এর ঘোর বিরোধী। ফলে ত্রিদলীয় এই জোটের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

‘মধ্যপন্থী রাজনীতির’ প্রতিশ্রুতি নিয়ে আত্মপ্রকাশ করা এনসিপি এখন নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও জোট রাজনীতির মারপ্যাঁচে বড় পরীক্ষার মুখে। জামায়াতের হাত ধরে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা দলের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয় বলে মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেকরা।