Home Third Lead টাকার রাজনীতি বনাম জনগণের শক্তি: আলোচনায় ডা. তাসনিম জারা

টাকার রাজনীতি বনাম জনগণের শক্তি: আলোচনায় ডা. তাসনিম জারা

ডা. তাসনিম জারা

 ২৯ ঘণ্টায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ

আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা: বাংলাদেশের প্রথাগত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ‘নির্বাচন’ মানেই যেখানে কোটি কোটি টাকার খেলা এবং পেশিশক্তির প্রদর্শন, সেখানে এক ভিন্নধর্মী দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। কোনো বড় শিল্পগোষ্ঠীর অনুদান বা কালো টাকার ওপর নির্ভর না করে, সরাসরি সাধারণ মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানে মাত্র ২৯ ঘণ্টায় তিনি পূরণ করেছেন তার নির্বাচনী তহবিলের লক্ষ্যমাত্রা।

অভূতপূর্ব সাড়া: ২৯ ঘণ্টায় ৪৭ লাখ টাকা

গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই অনলাইন ফান্ড রেইজিং ক্যাম্পেইনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ডা. জারা জানিয়েছেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রায় ৪৭ লাখ টাকা সংগ্রহ হয়ে যাওয়ায় তিনি আর কোনো অনুদান গ্রহণ করছেন না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত আবেদনে এত অল্প সময়ে জনসাধারণের কাছ থেকে এই পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ হওয়া একটি বিরল ঘটনা।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির নতুন মডেল

নির্বাচনী ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে সাধারণত বাংলাদেশে অনেক ধোঁয়াশা থাকে। তবে ডা. জারা এখানে ব্যতিক্রমী কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন:

ডিজিটাল ট্র্যাকবিলিটি: কোনো ক্যাশ লেনদেন না করে শুধুমাত্র একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও একটি বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয়েছে, যা সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা পর্যবেক্ষণযোগ্য।

শূন্য ভিত্তিক হিসাব: ব্যক্তিগত লেনদেনের সাথে যেন সংগৃহীত অর্থ না মেশে, সেজন্য সম্পূর্ণ নতুন অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনে অডিট: সংগৃহীত অর্থের পাই-পাই হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

বিশ্লেষণ: পেইড কর্মী নয়, ভরসা স্বেচ্ছাসেবক

প্রতিবেদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ডা. জারার কৌশল। তিনি জানিয়েছেন, ঢাকা-৯ আসনের প্রায় ৫ লাখ ভোটারের কাছে পৌঁছাতে তিনি ‘পেইড কর্মী’ বা অর্থের বিনিময়ে লোক নিয়োগ দেবেন না। এর পরিবর্তে তিনি ‘স্বেচ্ছাসেবী’ মডেলের ওপর জোর দিচ্ছেন। তার মতে, একজন পরিচিত মানুষের একটি ফোন কল বা সরাসরি কথা, হাজারো পোস্টার বা পেইড বিলবোর্ডের চেয়ে বেশি কার্যকর।

অসম লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ

অন্যান্য প্রার্থীরা যেখানে ১০ থেকে ৫০ কোটি টাকা খরচ করার সক্ষমতা রাখেন, সেখানে মাত্র ৪৭ লাখ টাকা নিয়ে ডা. জারা কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারবেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “জনগণের সম্মিলিত শক্তির সামনে কোটি কোটি কালো টাকা অসহায়।” তিনি তার সমর্থকদের সপ্তাহে ৪-৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া এবং পোলিং এজেন্ট হিসেবে সাহসী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

নতুন রাজনীতির ইঙ্গিত?

ডা. তাসনিম জারার এই উদ্যোগটি মূলত বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ‘টাকার রাজনীতি’ প্রত্যাখ্যান করে ‘জনগণের টাকায় জনগণের নির্বাচন’—এই স্লোগানটি সাধারণ মানুষের মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলে, তা ঢাকা-৯ আসনের ভোটের ফলাফলেই স্পষ্ট হবে। তবে তহবিল সংগ্রহের এই মডেলটি নিশ্চিতভাবেই পুরনো রাজনৈতিক ধারার মূলে একটি বড় নাড়া দিয়েছে।