শিপিং ডেস্ক: রবিবার সকালে কেরালার উপকূলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ল লাইবেরিয় পতাকাবাহী কন্টেইনারবাহী জাহাজ এমএসসি এলসা -৩ । বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শিপিং সংস্থা মেডিটেরিয়ান শিপিং কোম্পানি ( এমএসসি ) পরিচালিত জাহাজটি ৬৪০ টিইউস কন্টেইনারসহ দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে ডুবে গেছে। জাহাজটির একটি কার্গো হোল্ডে আকস্মিক পানি ঢুকে পড়ায় দ্রুত ডুবে যায় বলে জানিয়েছে ভারতীয় কোস্ট গার্ড।
১৮৪ মিটার দীর্ঘ এই কন্টেইনার জাহাজটি ভিযিনজাম বন্দর থেকে ছেড়ে কোচিতে যাচ্ছিল। জাহাজটির ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়ে অনেকগুলো কনটেইনার সাগরে পড়ে যায় এবং পরে তা সম্পূর্ণরূপে উল্টে যায়।

জাহাজটিতে ৬৪০টি কনটেইনারের মধ্যে ১৩টি বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ বহন করছিল এবং আরও ১২টিতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড-এর মতো দাহ্য পদার্থ ছিল। এ ছাড়া জাহাজটিতে ৮৪ মেট্রিক টন ডিজেল এবং ৩৬৭ মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল সংরক্ষিত ছিল। জাহাজটি ডুবে যাওয়ার পর পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে এই জ্বালানি।
দুর্ঘটনার সময় জাহাজে থাকা ২৪ জনের মধ্যে ২১ জনকে আগেই ভারতীয় কোস্ট গার্ড উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়। বাকি তিনজন ক্যাপ্টেন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য জাহাজে ছিলেন। পরে ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ সুজাতা তাঁদেরও উদ্ধার করে। এখন পর্যন্ত সব ক্রু নিরাপদ ও সুস্থ রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে।
ভারতীয় কোস্ট গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে দূষণ প্রতিরোধ জাহাজ ‘সক্ষম’ দুর্ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে। আকাশপথে নজরদারির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে উন্নত তেল ছড়িয়ে পড়া শনাক্তকারী প্রযুক্তি-সংবলিত বিমান। তবে এখন পর্যন্ত কোনও তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা শনাক্ত হয়নি।
কেরালা রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, সমুদ্রসৈকতে ভেসে আসা কনটেইনার, প্যাকেট বা অন্য কোনও বস্তু স্পর্শ না করতে স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলেদের অনুরোধ করা হয়েছে। কোথাও তেল ছড়িয়ে পড়া বা ভাসমান কনটেইনার দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ বা স্থানীয় উপকূল পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
ত্রিশূর, আলাপ্পুঝা ও কোচিসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জরুরি পরিষেবা ও ক্লিনআপ টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা মোকাবিলায়।
এই মুহূর্তে ভারতীয় নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড ঘটনাস্থলের চারপাশে অবস্থান করছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। ভেসে যাওয়া কনটেইনারগুলোর দিক ও গতিপথ নজরে রাখতে উপকূলীয় নজরদারিও জোরদার করা হয়েছে।
বিশ্ববাণিজ্যে ব্যবহৃত জাহাজগুলোর নিরাপত্তা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিয়ে এই দুর্ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে যখন জাহাজে বিপজ্জনক পদার্থ বহন করা হয়, তখন তা দেশের সমুদ্র ও উপকূলীয় পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কন্টেইনার পরিবহন সংস্থা এমএসসি পরিচালিত একাধিক জাহাজ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নানা দুর্ঘটনা ও হামলার শিকার হয়েছে। লোহিত সাগর থেকে শুরু করে নিউফাউন্ডল্যান্ড, হরমুজ প্রণালী থেকে কেরালার উপকূল পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা এই ঘটনাগুলো বৈশ্বিক নৌ চলাচল ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
- সমুদ্রপথে পরিবেশগত ঝুঁকি ও বৈশ্বিক নৌ নিরাপত্তা সংক্রান্ত আরও তথ্য ও বিশ্লেষণ জানতে বিজনেসটুডে২৪.কম-এর বিশেষ প্রতিবেদনগুলো পড়ুন।