Home আবহাওয়া হিমালয়ের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে কুড়িগ্রাম

হিমালয়ের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে কুড়িগ্রাম

উত্তর জনপদে জনজীবন বিপর্যস্ত

নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। গত কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিললেও রোদের তেজ নেই বললেই চলে। হিমাচলের হিমেল বাতাসের ঝাপটায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা পাড়ের চরাঞ্চলের মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি।

রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, আজ বৃহস্পতিবার ভোরে কুড়িগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বিপত্তি বাড়িয়েছে বাতাসের ১০০ শতাংশ আর্দ্রতা। জলীয় বাষ্পে ভরা এই বাতাসে শীতের অনুভূতি হচ্ছে আরও কয়েক গুণ বেশি। টানা চার দিন ধরে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির আশেপাশে থমকে আছে, যা মাসের শেষে শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভোর থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে পুরো জেলা। দৃষ্টিসীমা কমে আসায় হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় ঘরের বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন মানুষ। সবচেয়ে কষ্টে আছেন দিনমজুর ও রিকশাচালকরা।

সদরের এক রিকশাচালক আক্ষেপ করে বলেন, “শীতে হাত-পা অবশ হয়ে আসে, রিকশার হাতল ধরা যাচ্ছে না। কিন্তু ঘরে খাবার নেই, তাই বাধ্য হয়েই রাস্তায় নামতে হয়েছে।” শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের ওমে শরীর গরম করার দৃশ্য এখন নিত্যদিনের।

ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়ায় জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভিড় বাড়ছে। সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস জানিয়েছেন, শিশু ও বয়স্করা শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, জ্বর ও সর্দি-কাশিতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। জেলার ২৯৭টি কমিউনিটি ক্লিনিককে এ বিষয়ে সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামের কয়েকশ চরাঞ্চলের মানুষের দুর্দশা অবর্ণনীয়। চারদিকে খোলা আকাশ আর মাঝখানে পাতলা ছাউনির ঘর—হিমেল বাতাস সেখানে কোনো বাধাই মানছে না। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে চরের অনেক পরিবার বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছে। খড় বিছিয়ে বা একই কাঁথার নিচে গাদাগাদি করে ঘুমানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলছে অভাবী ঘরগুলোতে।

এক নজরে কুড়িগ্রামের আবহাওয়া:

  • সর্বনিম্ন তাপমাত্রা: ১১.৫° সে. (বৃহস্পতিবার)।
  • বাতাসের আর্দ্রতা: ১০০ শতাংশ।

মাসের শেষে শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা।কুড়িগ্রামের এই হাড়কাঁপানো শীত কেবল একটি ঋতু বদলের সংবাদ নয়, এটি হাজারো মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই। এই কঠিন সময়ে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।