রামেশ ভট্ট, কাঠমান্ডু: নেপালের তামাং আদিবাসী সম্প্রদায়ের “রোডি” প্রথা দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অনন্য দিক হিসাবে টিকে রয়েছে, যা যুবক-যুবতীদের মধ্যে সামাজিক মেলামেশা ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। এই প্রথা তামাং সমাজে শতাব্দীপ্রাচীন, তবে আধুনিকতার চাপে এর চর্চা এখন হ্রাস পেতে বসেছে।
রোডি কী?
রোডি হলো তামাং সম্প্রদায়ের একটি প্রথা, যেখানে যুবক-যুবতীরা দলবদ্ধভাবে একত্রিত হয়ে গান, নাচ, আড্ডা ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক活动中 অংশ নেয়। এটি মূলত একটি সামাজিক ক্লাব বা গোষ্ঠী, যেখানে সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
কীভাবে কাজ করে রোডি?
- সদস্যপদ: সাধারণত কিশোর-কিশোরী থেকে তরুণ-তরুণীরা রোডির সদস্য হয়।
- সময় ও স্থান: সাধারণত সন্ধ্যায় বা ছুটির দিনে নির্দিষ্ট স্থানে (ঘর বা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ) রোডির বৈঠক হয়।
- কর্মকাণ্ড: গানবাজনা, নাচ, কথোপকথন, community service ইত্যাদি।
- নেতৃত্ব: প্রতিটি রোডি দলের একজন নেতা বা নেত্রী থাকেন, যিনি দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
সমাজবিজ্ঞানীদের মত:
সমাজবিজ্ঞানী ড. অমৃত শেরচন বলেন, “রোডি প্রথা তামাং যুবসমাজকে সামাজিক দক্ষতা শেখায়, দলগত কাজের অভিজ্ঞতা দেয় এবং বিবাহপূর্ব সম্পর্ক গড়ার একটি নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ সরবরাহ করে। এটি পাশ্চাত্যের ডেটিং কালচার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, কারণ এটি সম্প্রদায়-নিয়ন্ত্রিত ও সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।”
অর্থনৈতিক প্রভাব:
স্থানীয় অর্থনীতি: রোডির অনুষ্ঠানগুলো স্থানীয় কৃষি ও হস্তশিল্প পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি করে।
পর্যটন: কিছু অঞ্চলে সাংস্কৃতিক পর্যটনের অংশ হিসাবে রোডি প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
যুব উন্নয়ন: রোডি সদস্যরা সম্মিলিতভাবে ক্ষুদ্রঋণ বা সমবায় গঠনের মাধ্যমে আয়-সৃষ্টিমূলক কাজেও জড়িত হয়।
বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ:
আধুনিকতার প্রভাব: শহরমুখী যুবসমাজ, মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাবে রোডির জনপ্রিয়তা কমছে।
বিবাহব্যবস্থায় পরিবর্তন: আগে রোডির মাধ্যমে পরিচয় হয়েই বেশিরভাগ তামাং যুবক-যুবতীর বিবাহ হতো; এখন সেই সংখ্যা কমে আসছে।
সংরক্ষণের প্রচেষ্টা: কিছু তামাং সংগঠন ও এনজিও রোডি প্রথা সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে।
এক তামাং যুবতীর কণ্ঠ:
২১ বছর বয়সী মিনা তামাং (ছদ্মনাম) বলেন, “আমাদের দাদী-নানীদের সময় রোডি ছিল সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। আজকাল আমরা ফেসবুক বা টিকটকে বন্ধু বানাই। তবুও আমাদের গ্রামে এখনও রোডি চলে, এবং সেটি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার একটি মাধ্যম।”
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে রোডির গুরুত্ব অস্বীকার করার নয়, কিন্তু এটি টিকিয়ে রাখতে হলে আধুনিক যুগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাংস্কৃতিক পর্যটন ও যুব উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে রোডিকে যুক্ত করে এর ভবিষ্যৎ রক্ষা করা সম্ভব।
বিশেষ নোট: এই প্রতিবেদনটি তৈরি করতে তামাং সম্প্রদায়ের সদস্য, নৃতত্ত্ববিদ ও স্থানীয় গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকার ব্যবহার করা হয়েছে।
রিপোর্ট: বিজনেসটুডে২৪ বিশেষ প্রতিনিধি
ওয়েবসাইট: www.businesstoday24.com










