Home অন্যান্য সম্পাদকীয়: ‘স্বপ্ন’ থেকে ‘পরিকল্পনা’

সম্পাদকীয়: ‘স্বপ্ন’ থেকে ‘পরিকল্পনা’

তারেক রহমান

সম্পাদকীয়

রাষ্ট্র সংস্কারে এক নতুন রাজনৈতিক দর্শনের আহ্বান

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে স্বদেশে ফেরার পর রাজধানীর ৩০০ ফিটের জনসমুদ্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া ভাষণটি কেবল একটি রাজনৈতিক বক্তৃতা ছিল না, বরং তা ছিল আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি রূপরেখা। বিশেষ করে, মার্কিন মানবাধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং-এর বিখ্যাত উক্তি ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’-এর প্রসঙ্গ টেনে তাঁর নিজের ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ ঘোষণাটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

মার্টিন লুথার কিং যখন স্বপ্ন দেখেছিলেন, তখন লক্ষ্য ছিল বর্ণবাদমুক্ত এক সাম্যের সমাজ। আর আজ তারেক রহমান যখন ‘পরিকল্পনা’র কথা বলছেন, তখন তাঁর লক্ষ্য স্পষ্টত—একটি কার্যকর গণতন্ত্র, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রকাঠামো এবং টেকসই উন্নয়ন। স্বপ্ন মানুষকে অনুপ্রাণিত করে, কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজন নিখুঁত পরিকল্পনা। তারেক রহমানের এই বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি কেবল আবেগের ওপর ভিত্তি করে রাজনীতি করতে চান না, বরং একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে এগোতে চান।

তারেক রহমানের এই ‘প্ল্যান’ বা পরিকল্পনার কয়েকটি দিক বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ:

১. ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, জনমুখী রাজনীতি: তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, এই পরিকল্পনা এককভাবে তাঁর নয়, বরং এটি বাস্তবায়নে দেশের প্রতিটি মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে তিনি নাগরিকের ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

২. জাতীয় ঐক্যের ডাক: মঞ্চে সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি এবং সবাইকে নিয়ে ‘সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় প্রমাণ করে যে, তিনি বিভাজনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে আগ্রহী।

৩. ২০২৪-এর চেতনা ও গণতন্ত্র: তিনি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার সাথে তুলনা করেছেন। এর অর্থ হলো, দ্বিতীয় স্বাধীনতার এই চেতনাকে অর্থবহ করতে হলে গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করাই হবে তাঁর পরিকল্পনার মূল ভিত্তি।

তারেক রহমান তাঁর ভাষণে কেবল দলের নেতাকর্মীদের নয়, বরং আপামর জনসাধারণকে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি একটি দায়িত্বশীল নেতৃত্বের পরিচয়, যেখানে নেতা কেবল পথ দেখান না, বরং জনগণকে সেই পথের অংশীদার করেন।

পরিশেষে বলা যায়, ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’—এই ঘোষণাটি দেশের রাজনীতিতে এক ধরণের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনতে পারে। দেশের মানুষ এখন কেবল রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি শুনতে চায় না, তারা চায় সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নযোগ্য প্রতিফলন। তারেক রহমানের এই ঘোষণা সেই প্রত্যাশারই প্রতিধ্বনি। এখন সময় দেখার, এই ‘প্ল্যান’ বা পরিকল্পনা কীভাবে একটি আধুনিক, বৈষম্যহীন এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হয়।